খাল উদ্ধারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উচ্ছেদ অভিযানের তৃতীয় দিন ঢাকার মোহাম্মদপুরে সাদেক এগ্রোর খামারের পুরোটাই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই খামারের গরু-ছাগল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির সাভারের খামারে।
শনিবার (২৯ জুন) দুপুরে টানা তৃতীয় দিনের মতো মোহাম্মদপুর সাত মসজিদ হাউজিং এলাকায় এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযান শুরুর গত বৃহস্পতিবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কেবল খালের ওপর থাকা স্থাপনা ভেঙে দিয়েছিলেন। এরপর টানা তিন দিন ধরে চলে অভিযান। পুরো খামারটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ট্রেড লাইসেন্স না থাকা, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনা এবং খালের পাড় ঘেঁষে স্থাপনা গড়ার নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে।
অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছেন ডিএনসিসির অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর আহমেদ এবং ডিএনসিসির সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব হাসান। এ সময় স্থানীয় কাউন্সিলর আসিফ আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর বলেন, তিন দিনের অভিযানে প্রায় শতাধিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়ে এখন পর্যন্ত খালের বিপুল পরিমাণ জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে। আর খালের কয়েকশ টন বর্জ্য পরিষ্কার করে বর্তমানে খাল খননের কাজ চলছে।
পুরো স্থাপনা ভাঙার কারণ জানতে তিনি বলেন, খালের পাশে ও আবাসিক এলাকায় গরুর খামার রাখার নিয়ম নেই। আর তাদের ট্রেড লাইসেন্স ছিল না। সব কিছু মিলিয়ে সাদেক এগ্রো অবৈধ স্থাপনাগুলো আমরা ভেঙে দিয়েছি। খালের ওপর তো না-ই, এমনকি খালের পাড় ঘেঁষেও বাড়ি করা যাবে না, এটারও একটা নীতিমালা আছে। এই নীতিমালাও তারা অনুসরণ করেনি। এখানে খামার করেছে, সেটার ট্রেড লাইসেন্স নাই। তারা প্রথম দিনেই বলেছিল সবকিছু সরিয়ে নেবে, কিন্তু সরায়নি। তবে আজ বিকেলে আমি গিয়ে খামারে তাদের গরু পাইনি।
খালের প্রশস্ত কোথাও ১০০ আবার কোথাও ১২০ ফুট পর্যন্ত ছিল বলেও জানান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। সেসব সম্পূর্ণ দখল করে রেখেছিল বিভিন্ন মানুষজন সেসব উদ্ধার করেছে ডিএনসিসি। তিনি বলেন, খালের দুই পাশে নিয়মনীতি মেনে, রাজউকের অনুমতি নিয়ে যারা ভবন বা স্থাপনা করেছে সেসব রাখা হয়েছে। বাকিসব ভেঙে ফেলা হয়েছে।
প্রথম দিন সাদেক এগ্রোর স্থাপনার শুধু পেছনের অংশ ভাঙা হয়। সেদিন ডিএনসিসির পক্ষ থেকে বলা হয়, সাদেক এগ্রোর পেছনের কিছু অংশ খালের (রামচন্দ্রপুর খাল) জায়গায় পড়েছে। পুরো স্থাপনা খালের জায়গায় পরেনি। শুক্রবারও উচ্ছেদ অভিযান চলে, কিন্তু খারাপ আবহাওয়ায় বিঘ্নিত হয় কার্যক্রম। মোহাম্মদপুরেই আরও একটি খাল দখল করে সাদেক এগ্রোর আরও একটি খামার আছে। সে বিষয়ে সরকারি কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
গত কয়েক বছর ধরেই মোহাম্মদপুরের সাদেক এগ্রো গরুর মাংসের বাজারে আলোচনায় আছে। কোরবানির জন্য এই সাদেক এগ্রো থেকে ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনতে গিয়েছিলেন এনবিআরের সদস্য মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তুমুল আলোচনা হয়। এরপর মতিউর রহমান ও তার পরিবারের বিপুল সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসে। মতিউরকে এরই মধ্যে এনবিআর থেকে অপসারণ করা হয়েছে। তার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
খামারটি খালের জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে, সেটি পুরোনো তথ্য হলেও এতদিন সরকারি সংস্থা তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়নি। তবে নতুন পরিস্থিতিতে ডিএনসিসি অভিযানে যাওয়ার খবর আগেভাগেই জানায় গণমাধ্যমকে।
এই উচ্ছেদ অভিযানের বিষয়ে সাদেক এগ্রোর বক্তব্য জানা যায়নি। খামারটির মালিক ইমরান হোসেনকে ফোন করলে তিনি সাড়া দেননি।
গবাদিপশুর খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি গত বৃহস্পতিবারের উচ্ছেদ অভিযানেও ছিলেন না। খামারটির ইনচার্জ সুমন খান সেদিন বলেছিলেন, তারা জমি ইজারা নিয়ে খামারটি গড়েছেন। এখানে তাদের দায় নেই।
মন্তব্য করুন