নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়ার দেড় বছরের মাথায় সারা দেশের দিকে তাকালে যে কেউ বুঝতে পারবেন তথাকথিত স্মার্ট নাগরিক বানানো, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী বানানোর এই শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে যেটুকু লেখাপড়া ছিল তাও শেষ হয়ে গেছে।
প্রতিদিন নিত্যনতুন নির্দেশনা দেওয়া ও বাতিল করা, কীভাবে পরীক্ষা হবে এবং মূল্যায়ন হবে সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতা ও হ-য-ব-র-ল নির্দেশনায় ছাত্র-শিক্ষকরা আজ অসহায়, অভিভাবকরা নিরুপায়।
নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবিতে শুক্রবার (৩১ মে) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে বক্তারা এসব কথা বলেন। মানববন্ধনের আয়োজন করে সচেতন অভিভাবক সমাজ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের কারণে শিক্ষার মানের যে আরও পতন হবে- সে বিষয়ে সচেতন শিক্ষাবিদ, শিক্ষকসহ দেশ-বিদেশের বহু মানুষ শিক্ষাক্রম প্রণয়নের সময় থেকেই বলে আসছিলেন, লিখে আসছিলেন এবং নানা কর্মসূচিও গ্রহণ করছিলেন। কিন্তু সরকার সে কথা শোনার প্রয়োজন মনে করেনি।
মানববন্ধনে শিক্ষা ও শিশু রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক রাখাল রাহা বলেন, এ দেশের শিশুরা ছোটবেলায় পুতুল খেলতে অভ্যস্ত। আজ সরকার যেন কয়েক কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে তেমনই পুতুল খেলছে। শিশুদের পুতুল খেলার মধ্যে তাদের আবেগ-বিবেক কাজ করে, তারা সেই খেলার মাঝেই হাসে-কাঁদে। কিন্তু আজ এ দেশের কোটি কোটি শিশুর শিক্ষাজীবন নিয়ে যারা পুতুল খেলছে তাদের কোনো আবেগ-বিবেক নেই। তারা সম্পূর্ণ সজ্ঞানে এবং স্বেচ্ছায় এই ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা করছে।
তিনি বলেন, তারা এসব যজ্ঞ শুরুর আগে অনেক আশার কথা শোনায় এবং সেটা ব্যর্থ হলে আবার আরেকটা হাজির করে। আগেরটা কেন ব্যর্থ হলো, এর জন্য কে দায়ী, কে জবাবদিহি করবে, এই ক্ষতি কীভাবে পূরণ হবে- এসব বিষয়ে তখন তারা বেমালুম ভুলে যায়। কিন্তু সন্তানের শিক্ষার এই ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ দেখে যখন অভিভাবক, শিক্ষক বা সচেতন মহল কথা বলেন, প্রতিবাদ করেন তখন তারা জেগে ওঠে। তারা তখন রাতের আঁধারে অভিভাবকদের গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে মিথ্যে মামলা সাজিয়ে জামিন নামঞ্জুর করে হাজতখানায় পাঠিয়ে দেয়।
তিনি আরও বলেন, সন্তানের জন্য ভালো মানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে আগে ভালো শিক্ষক দরকার, তাদের ভালো বেতন দরকার, ভালো প্রশিক্ষণ দরকার, তাদের স্বাধীনতা দরকার, স্কুল-কলেজের ওপর থেকে দুর্বৃত্ত ব্যবস্থাপনা কমিটির অপসারণ দরকার, প্রশাসনিক হয়রানি থামানো দরকার। কিন্তু তা না করে প্রতিনিয়ত শিক্ষার উন্নয়নের নামে যা করা হচ্ছে তাতে শিক্ষার আরও পতন ঘটছে। যে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করে লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তদানের বিনিময়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি, আজ সেই পাকিস্তানের চেয়েও আমাদের শিক্ষার মান অনেক নিচে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কি হতে পারে। তাই শিক্ষার মানের এই ধারাবাহিক পতনের পথ থেকে সরকারকে সরে আসতেই হবে। তার জন্য অবিলম্বে ধ্বংসাত্মক এই শিক্ষাক্রম বাতিল করতে হবে।
মানববন্ধন কর্মসুচি থেকে সারা দেশে স্কুলের সামনে অভিভাবকদের প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন ইত্যাদি ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সচেতন অভিভাবক সমাজের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মুসলিম বিন হাইয়ের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রে সভাপতি সীমা দত্ত, অভিভাবক ডা. আরিফ মুর্শেদ খান, জেসমিন আক্তার, এবিএম জাকারিয়া রাজিব, আল আসমা উল হুসনা, নাসির উদ্দিন বিশ্বাস, মারজান আক্তার প্রমুখ।
মন্তব্য করুন