কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪৩ এএম
অনলাইন সংস্করণ
ঈদের কেনাকাটা

নিম্ন মধ্যবিত্তের ‘ফুটপাত’ মধ্যবিত্তদের দখলে

রাজধানীর সুপার মার্কেট। ছবি : কাজল হাজরা
রাজধানীর সুপার মার্কেট। ছবি : কাজল হাজরা

বছরজুড়েই মূল্যস্ফীতিতে সবচেয়ে বেশি ভুগছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। কারণ তাদের বেশিরভাগের আয় নির্দিষ্ট। কিন্তু ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুণ। সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদুল ফিতর ঘিরে তারা তেমন বড় কোনো পরিকল্পনা করতে পারছেন না। অনেক দরদাম, হিসাব-নিকাশ করেই ঈদের কেনাকাটা করতে হচ্ছে তাদের। মধ্যবিত্তদের কেনাকাটার সবচেয়ে বড় জায়গা নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনী চক, মৌচাক এবং এর আশপাশের মার্কেটগুলো। এক সপ্তাহ ধরে এসব মার্কেটের সামনে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেলেও ১৫ রমজানেও তেমন ভিড় ছিল না। ঈদের আগে আগামী এক বা দুই দিন ভিড় আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন দোকানিরা। আর মধ্যবিত্তের পরিচিত দোকানগুলোতে এবার বাজেটের সঙ্গে দরদামের হিসাব না মেলায় অনেকে ফুটপাত থেকে কেনাকাটা করছেন। ফলে নিম্ন মধ্যবিত্তদের কেনাকাটার জায়গা এখন অনেকটাই মধ্যবিত্তদের দখলে চলে গেছে। ফলে ফুটপাতের চেহারাও পাল্টে গেছে। সেখানেও দরদাম করার সুযোগ না রেখে একদামে বিক্রি হচ্ছে পণ্য। দামও তুলনামূলক বেশি। আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের পাঞ্জাবি ব্যবসায়ী শাহীন মাহমুদ বলেন, পাঞ্জাবি সাধারণত শেষ মুহূর্তেই কেনেন সবাই। রমজানের শুরুতে বিক্রি কম হলেও গত এক সপ্তাহে বেড়েছে।

পাঞ্জাবি কিনতে আসা মোহাম্মদ আলী বলেন, এখানে তুলনামূলক কম দামেই বাবা আর ছেলের জন্য পাঞ্জাবি কিনেছি। নিজের জন্য কী কিনলেন জানতে চাইলে বলেন, ওদের হাসিমুখ দেখলেই আমার ঈদের আনন্দ পাওয়া হয়ে যাবে।

তবে শাড়ি আর গহনার দোকানে ভিড় ছিল সবচেয়ে কম। কারণ মধ্যবিত্তরা এবার বাজেট কাটছাঁট করতে গিয়ে পরিবারের ছোট আর বৃদ্ধদের বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। ফলে অধিকাংশ মায়েরা নিজেদের জন্য শাড়ি কেনা বাদ দিয়েছেন। বাহুল্য হিসেবে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গহনাও বাদ দিয়েছেন অনেকেই। তবে যাদের সাধ্য আছে, তারা ঠিকই সবার জন্য সব কেনাকাটা করছেন।

গাউছিয়া মার্কেটে ফারজানা হক নামে এক ক্রেতা বলেন, দুই মেয়ের জন্য জামা কিনতে এসেছি। পছন্দ আর বাজেট মেলাতে পারছি না। পরে তিন হাজার টাকায় দুই মেয়ের জন্য জামা কিনেছি। কিন্তু জুতা আর গহনার বায়না থাকলেও তা দেওয়ার সাধ্য নেই।

মায়ের জন্য শাড়ি কিনতে এসেছেন হাসান আহমেদ। তিনি বলেন, মা অনেক বারণ করেছে। তার পরও মন মানছে না। তাই মায়ের জন্য অল্প বাজেটের মধ্যে একটা শাড়ি কিনেছি।

অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের ঈদের বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতি এখন পর্যন্ত কমই দেখা যাচ্ছে। অন্যবার ১০ রমজানের পর থেকেই ঈদের বেচাবিক্রিতে দোকানিরা ব্যস্ত সময় পার করেছেন। তবে এবার এখনো আগের বছরের তুলনায় বিক্রি প্রায় ৫০ শতাংশ কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মৌচাক মার্কেটের সামনের ফুটপাতে শিশুদের পোশাক বিক্রি করা সাইফুল ইসলাম বলেন, গত বছরেও রমজানের এই সময়ে দিনে প্রায় ৪০ হাজার টাকার বিক্রি হতো। এখন মাত্র ৭-৮ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে।

আগের তুলনায় এবার পোশাকের দাম তুলনামূলক বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটে কেনাকাটা করতে এসেছেন বেসরকারি কলেজের শিক্ষক মুমেনুল। দুই মেয়ের জন্য ৪ হাজার টাকার পোশাক কিনেছেন। তিনি বলেন, এসব কাপড় সবসময় ১ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যেত, এখন এগুলো ২ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে।

অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের কিনতেই হচ্ছে বেশি দামে। এর সঙ্গে বিদ্যুৎ বিল, দোকান ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় তার সব কিছু যুক্ত করতে হচ্ছে কাপড়ের দামে। সেজন্য অন্য বছরের তুলনায় এবার দাম বেশি রাখতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের কথার সঙ্গে দেশের মূল্যস্ফীতির স্পষ্ট চিত্র ফুটে উঠছে। দুই বছরে ধরে দেশে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি বলে জানা যায় সরকারি হিসাবে। এ ছাড়া কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে ৫০-৬০ শতাংশ, যদিও মানুষের আয় ৫ শতাংশের বেশি বাড়েনি।

তবে কয়েক দিন ধরে রাজধানীর ফুটপাতের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেড়েছে। তবে ফুটপাতে দেখা মেলে না আগের দৃশ্য। অল্প টাকায় দরদাম করে নিম্নবিত্তদের পোশাক কেনার পরিবর্তে একদামে মধ্যবিত্তরাই কিনছেন ফুটপাতের অধিকাংশ দোকান থেকে। আর ঈদের কেনাকাটা নিম্নবিত্তদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বেশি দামে কিনতে হয় বলে পোশাকের দাম কম রাখতে পারেন না বলে জানান সাইফুল। তিনি বলেন, গতবার যে গেঞ্জি গড়ে ১৮০ টাকায় কিনেছি, সেগুলো এখন ২৫০ টাকায় পাইকারি কিনতে হচ্ছে। গ্রাহকদের ৩০০ টাকা দাম বললে তারা কেনা দামের চেয়েও কম দাম দিতে চায়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে সরকার’ 

ট্রাস্ট ফান্ড বৃত্তি পেলেন ঢাবির ২০ শিক্ষার্থী

আন্দোলনে শহীদদের পরিবারকে যে সুবিধা দিল এনবিআর

‘আমাদের কথা মনে রেখ’ : কান্নারত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নিয়ে পোস্ট দেওয়ায় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা গ্রেপ্তার

বাবাকে নিয়ে যা বললেন তাহসানের হবু স্ত্রী

২২৭ জনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

৬০০ পিস ইয়াবাসহ দুই মাদক কারবারি আটক

বিএনপি কচুরিপানার মতো ভেসে আসে নাই : প্রিন্স

ভিসা ও ইকামাসহ ৭ সেবায় ফি বাড়াল সৌদি

১০

‘দেশের গণতন্ত্র রক্ষা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ছাত্রদলকে সজাগ থাকতে হবে’

১১

বিএনপি নেতা এসএ খালেক মারা গেছেন

১২

বাড্ডায় অপহৃত ব্যক্তি উদ্ধার, চক্রের এক সদস্য গ্রেপ্তার

১৩

কূটনীতিক মহসিনকে শাস্তির আওতায় আনতে ৭ দিনের আলটিমেটাম

১৪

জিসান হত্যায় ৩ জনের ফাঁসির রায়

১৫

নিজ অফিসে ফ্যানের আংটায় ঝুলছিল বাকৃবি কর্মকর্তার মরদেহ

১৬

তাহসান-রোজার বিয়ে নিয়ে তসলিমা নাসরিনের স্ট্যাটাস

১৭

আরও পাঁচ ব্যাংকের এমডি বাধ্যতামূলক ছুটিতে

১৮

মিরপুর থেকে ছিনতাই চক্রের দুই সদস্য গ্রেপ্তার

১৯

তিব্বতে বাঁধ ঘিরে ভারতের উত্তেজনা, যা জানাল চীন

২০
X