ঈদের আনন্দকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয় নতুন পোশাক। ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে তাই নামিদামি ব্র্যান্ডগুলো নিজেদের নান্দনিক ডিজাইনে পোশাক নিয়ে আসে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সাধারণত পছন্দের পোশাক কিনতে নিরাপদ এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নামিদামি এসব ব্র্যান্ডের শোরুমগুলোতে ভিড় করেন অভিজাত বা উচ্চবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারা। ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই সাধারণ পোশাকের দোকানের তুলনায় ভিড় ও বিক্রি বেড়েছে ব্র্যান্ডের শোরুমগুলোতে।
সোমবার (৮ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। বিশেষ করে গুলশান, বনানী ও উত্তরা, বেইলি রোড, এলিফ্যান্ট রোড, বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্স এবং যমুনা ফিউচার পার্ক ঘুরে দেখা গেছে, ফ্যাশন হাউসসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিপণিবিতানগুলো সাজিয়ে বসেছে নতুন নতুন নকশার পোশাক, জুতা ও অন্যান্য সামগ্রী। এসব এলাকার বিপণিবিতানে উচ্চ মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত ক্রেতাদেরই ভিড় বেশি। বিক্রিও হচ্ছে ভালো।
বিপণিবিতানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, পছন্দ অনুযায়ী প্রিয়জনের জন্য পোশাক, জুতা, কসমেটিকস, অলঙ্কারসহ প্রয়োজনীয় নানা জিনিসপত্র কিনছেন ক্রেতারা। বিক্রি ভালো হওয়ায় খুশি বিক্রেতারাও। তবে রোজার প্রথম দিকের তুলনায় শেষ দিকে ভিড় কিছুটা কম। দিনে-রাতে কেনাকাটর সুবিধা থাকায় অনেকে ভিড় এড়ানোর জন্য মধ্যরাতেও আসছেন মার্কেটে। সাধারণত উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তরা এসব ব্র্যান্ডেড শপের ক্রেতা; তাই এসব শপে থাকে দামি পোশাকের বাহার। বেশিরভাগ শোরুমে ৫ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার পাঞ্জাবি, তিন হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার থ্রিপিস এবং ৪ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে।
রোজার শুরু থেকেই সরগরম থাকা দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সসহ রাজধানীর বড় বড় শপিংমলে শেষ সময়ে আরও বেশি জমজমাট হয়ে উঠেছে। একই ছাদের নিচে উন্নতমানের সব ব্র্যান্ড একসঙ্গে থাকায় ভোগান্তি ছাড়াই কেনাকাটা করছেন উচ্চবিত্ত ক্রেতারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দাম বেশি হলেও পোশাকের মান এবং ব্র্যান্ডকেই গুরুত্ব দেন এলিট শ্রেণির ক্রেতারা। যে কারণে দেশের নামিদামি ব্র্যান্ডগুলোর প্রতি ঝোঁক বেশি থাকে তাদের।
সাধারণত পাঞ্জাবির জন্য উচ্চবিত্তদের প্রথম পছন্দ থাকে ফ্যাশন হাউস ভাসাবি। প্রতি বছরই ঈদ উপলক্ষে বাহারি আয়োজন থাকে ভাসাবিতে। প্রতিষ্ঠানটির গুলশান-১ শোরুম ঘুরে দেখা গেছে, ৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৮৯ হাজার টাকার পাঞ্জাবি, ৩ লাখ টাকার লেহেঙ্গা, ৬ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকায় শাড়ি, ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা দাম বাচ্চাদের একটি পোশাকের। ঈদের বাজারে ব্যয়বহুল এসব পোশাকের ক্রেতাও কম নয়। ঈদে উচ্চবিত্ত ক্রেতাদের আগ্রহ থাকে বিদেশি চেইনশপগুলোর দিকে। মূলত তাদের চাহিদার কথা ভেবেই ব্যয়বহুল ঈদ পোশাকের পসরা সাজায় ভাসাবির মতো অভিজাত এই দোকানগুলো।
এদিকে সেলিব্রেটি এবং বড় ব্যবসায়ীদের পছন্দের তালিকায় থাকা লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড রয়েল মালাবার ঈদ উপলক্ষে নান্দনিক সব ডিজাইনের পোশাক এনেছে। ব্র্যান্ডটির রয়েছে ৬ হাজার থেকে ৫০ টাকার পাঞ্জাবি, ৩ হাজার থেকে শুরু করে ৩ লাখ টাকার শাড়ি এবং ৪ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার বিভিন্ন ধরনের থ্রিপিস।
রয়েল মালাবার লাইফস্টাইলের হেড অব মার্কেটিং বুলবুল আহমেদ কালবেলাকে বলেন, সবসময় আমরা চেষ্টা করি নতুন নতুন কালেকশন নিয়ে আসতে। আমাদের মূলত এলিট শ্রেণির ক্রেতা বেশি। বিশেষ করে সেলিব্রেটি এবং বিজনেসম্যানদের পছন্দ রয়েল মালাবার। পাশাপাশি সাধারণ অনেকের আগ্রহ দেখা গেছে।
এ ছাড়া দেশের শীর্ষস্থানীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড আড়ং, ইনফিনিটি, ইয়েলো, লা রিভ, লুবনান, টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির, কে ক্রাফট, অঞ্জনস, আর্টিসান, টপ টেন, ইল্লিয়ন, জেন্টল পার্ক, নাবিলা ফ্যাশনসহ পোশাকের ব্র্যান্ড ও শপগুলোতে প্রচুর ক্রেতা সমাগম দেখা গেছে।
রাজধানীর বেইলি রোডের লুবনানের শোরুম ঘুরে দেখা গেছে, এখানে উচ্চবিত্তদের ভিড় বেশি। শোরুমটিতে পাঞ্জাবির দাম ৩ থেকে ১৬ হাজার টাকার মধ্যে। শাখার ইনচার্জ ইমরান কবির বলেন, আমাদের এখানে উচ্চবিত্ত কাস্টমার বেশি। সাধারণত ১০ থেকে ১৬ হাজার টাকার মধ্যে পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি। প্রত্যাশা অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বেশি বিক্রি হচ্ছে যমুনা ফিউচার পার্কে।
রাজধানীর কাঁটাবন মোড়ে টপটেনে অন্য যে কোনো ব্র্যান্ড শপের তুলনায় ভিড় বেশি দেখা গেছে। এ ছাড়া সব ধরনের পণ্য পাওয়ায় বিক্রিও তুলনামূলক বেশি হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন প্রায় ৪০ লাখ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে টপটেনে।
এই শাখার ম্যানেজার মোরশেদ আলম বলেন, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত— সবার বাজেটের শার্ট, প্যান্টের কাপড় পাওয়া যায় তাদের কাছে। গত বছরগুলোর তুলনায় এবার বিক্রি বেশি।
এ ছাড়া অভিজাতদের ভিড় দেখা গেছে রাজধানীর বিভিন্ন আউটলেটে। সব বয়সীদের পোশাক পাওয়া যায় বলে ভিড়ও তুলনামূলক বেশি থাকে আড়ংয়ে।
মন্তব্য করুন