রমজান মাসজুড়ে রাজধানীতে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম, মাংস বিক্রি করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। তবে অল্প সময়ে পণ্য শেষ হয়ে যাওয়াসহ এ পরিষেবায় শুরু থেকেই নানা অভিযোগ। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় রমজানের শেষ সময়ে এসে দেখা গেছে একজন ক্রেতা ১ কেজির বেশি মাংস নিতে চাইলে কেজিপ্রতি দিতে হচ্ছে বাড়তি ৫০ টাকা।
শনিবার (৬ এপ্রিল) আজিমপুর মাতৃসদন সংলগ্ন বিশতলা সরকারি কোয়ার্টারের সামনে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রসহ অন্তত ৩টি স্থান ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
সরেজমিনে আজিমপুরের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, সকাল ৯টার মধ্যে পণ্য নিয়ে ফ্রিজারভ্যান পৌঁছার কথা থাকলেও সেটি আসে সকাল সাড়ে ১০টার পর। গাড়ি দেখেই অপেক্ষমাণ ক্রেতারাদের মধ্যে তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা। যা সামাল দিতেই পার হয় আরও কিছু সময়। এরপর বেলা ১১টা থেকে বিক্রি শুরু হয়।
একপর্যায়ে বিক্রি কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ঘোষণা দেন, গরুর মাংস ৬০ প্যাকেট আছে যা মহিলা ও পুরুষ মিলিয়ে পাবেন। বেলা ১১টা ২৩ মিনিটে আবারও বলা হয়, একজন ক্রেতা যে কোনো ধরনের মাংস ১ কেজির বেশি পাবেন না। তবে কেউ ১ কেজির বেশি নিতে চাইলে কেজি প্রতি দিতে হবে ৫০ টাকা বেশি। তবে দুধ-ডিম পাওয়া যাবে চাহিদামতো।
সিয়াম নামে একজনকে দেখা যায় পণ্যর ভাউচার লিখতে। ক্রেতা সেজে লাইনে দাঁড়িয়ে এ প্রতিবেদক গরুর মাংস কিনতে যান তার কাছে। দীর্ঘ চেষ্টার পর সামনে আসতেই সিয়াম বলেন, লাইন আরও পেছনে নিতে হবে। না নেওয়া পর্যন্ত বিক্রি বন্ধ। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, গরম লাগে এজন্য তিন ফুট দূরে দাঁড়াতে হবে।
প্রতিবেদক ১ কেজি গরুর মাংস এবং ১ কেজি বয়লারের মাংস নিতে চাইলে সিয়াম বলেন, যে কোনো মাংস ১ কেজি নেওয়া যাবে। যদি গরু মাংস ২ কেজি নিতে চাই তাহলে ১০০ টাকা বেশি দিতে হবে। মুরগির মাংসের ক্ষেত্রেও একই শর্ত।
গরু ও মুরগি সমানভাবে সর্বনিম্ন ১ কেজি পরিমাণও না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে সিয়াম বলেন, চাহিদা অনেক বেশি। বহু মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। সবাইকে দিতে হলে গরুর কিংবা মুরগির মাংসের যে কোনো ১টা নিতে হবে।
বাড়তি টাকা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিরক্তের সুরে তিনি বলেন-
এত কথা বলার সময় নেই। পরেরজনকে নিতে দিন। বাড়তি টাকা ভাউচারে যুক্ত না করার বিষয়েও কোনো উত্তর দেননি তিনি। এ সময় অনেকেই দেখা যায় বাড়তি কেজি প্রতি ৫০ টাকা দিয়ে একাধিক মাংসের প্যাকেট সংগ্রহ করতে।
পুরান ঢাকা থেকে আসা আজিজুল হক নামে এক ক্রেতা কালবেলাকে বলেন, সকাল ৯টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। তাও ১৩ জনের পেছনে পড়তে হয়েছে। আজ অফিস না থাকায় এসেছি। যে পরিমাণ কষ্ট করতে হয়েছে, জানলে আসতাম না। তাও যদি মাংস পেতাম। শর্ত দিয়েছে গরু নিলে মুরগি দিবে না। অন্যদিকে ৫০ টাকা বেশি দিলে নেওয়া যাবে। এটা অরাজকতা ছাড়া কিছু না বলে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলতে দেখা যায় তাকে।
লালবাগ থেকে এসেছেন আসা রাণী শীল। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, এসেছিলাম খাসির মাংস আর দুধ-ডিম নিতে। ১০টায় এসে পেছনে পড়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত খাসির মাংস পাইনি। মুরগি আর ডিম-দুধ নিয়েছি।
পণ্য বিক্রিতে বাড়তি টাকা নেওয়ার প্রসঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. নাজমুল হাসান কালবেলাকে বলেন, বাড়তি টাকা নেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। কোনো সুযোগও নেই। এরকম হওয়ার কোনো কথা না, বিষয়টি আমরা দেখছি।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে গরুর মাংস নিলে মুরগির মাংস নেওয়া যাবে না এমন কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। বাড়তি টাকা নেওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। বিষয়টি নিয়ে আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি যদি আমরা আরও আগে কিংবা তৎক্ষণাৎ জানতাম তখনি ব্যবস্থা নিতাম।
১০ মার্চ সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম, মাংস ও মাছ বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আবদুর রহমান। ছবি : সংগৃহীত
রমজান মাসে রাজধানীর ৩০টি স্থানে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম, মাংস বিক্রি করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। আর মাছ বিক্রি চলে ১৫ রমজান পর্যন্ত। ১ম রমজান থেকে শুরু হওয়া দুধ, ডিম, মাংস বিক্রি চলবে ২৮ রমজান পর্যন্ত। গেল ১০ মার্চ রোববার সুলভ মূল্যে রাজধানীর খামারবাড়িতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে দুধ, ডিম, মাংস ও মাছ বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আবদুর রহমান।
এই কর্মসূচির আওতায় তরল দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকা, ডিম প্রতিটি ৯ দশমিক ১৭ টাকা (১ ডজন ১১০ টাকা), গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি ৯০০ টাকা এবং চামড়া ছাড়ানো ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
রাজধানীর ৩০টি স্থানের মধ্যে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্র ২৫টি এবং স্থায়ী বাজার ৫টি। ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রগুলো হলো নতুন বাজার (বাড্ডা), কড়াইল বস্তি (বনানী), খামারবাড়ি (ফার্মগেট), আজিমপুর মাতৃসদন (আজিমপুর), গাবতলী, দিয়াবাড়ী (উত্তরা), জাপান গার্ডেন সিটি (মোহাম্মদপুর), ষাটফুট রোড (মিরপুর), খিলগাঁও (রেলক্রসিংয়ের দক্ষিণে), সচিবালয়ের পাশে (আবদুল গনি রোড), সেগুনবাগিচা (কাঁচাবাজার), আরামবাগ (মতিঝিল), রামপুরা, কালশী (মিরপুর), যাত্রাবাড়ী (মানিকনগর গলির মুখে), নয়া বাজার (পুরান ঢাকা), বসিলা (মোহাম্মদপুর), হাজারীবাগ (সেকশন), লুকাস (নাখালপাড়া), কামরাঙ্গীর চর, মিরপুর ১০, কল্যাণপুর (ঝিলপাড়া), তেজগাঁও, পুরান ঢাকা (বঙ্গবাজার) ও কাকরাইল।
আর স্থায়ী বাজার হলো মিরপুর শাহ আলী বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, নতুন বাজার (১০০ ফুট), কমলাপুর ও কাজী আলাউদ্দিন রোড (আনন্দবাজার)।
মন্তব্য করুন