মানুষ হোটেলে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোনো বিড়াল বা কুকুর হোটেলে থাকছে, শুনে হয়তো চোখ কপালে উঠবে আপনার। কিন্তু এই ঘটনাই সত্যি। তাও আবার বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। স্থানীয় একটি হোটেলে প্রায় এক বছর ধরে থাকছে এক চিকিৎসকের পোষা বিড়াল।
বিড়ালটির নাম প্যান্ডা। এর মালিক ডাক্তার মাইমুনা সিফা। বর্তমানে তিনি আছেন ইউরোপের কোনো একটি দেশে। বিদেশে যাওয়ার পর প্যান্ডার দেখভাল করতেন তার বাবা-মা। কিন্তু তাদের অসুস্থতার কারণে যত্নআত্মিতে ঘাটতি পড়ে প্রিয় প্রাণীটির। এরপর বিড়ালটিকে হোটেলে পাঠায় সিফা।
প্যান্ডার প্রিয় খাবার মুরগির মাংস। প্রতিদিন ৩ বেলা সেদ্ধ করে দিতে হয় মাংস। মাসে ১২ কেজির মতো মাংস লাগে প্যান্ডার। ৪২০ টাকা কেজি দরে তার পেছনে খাবারে খরচ হয় ৫ হাজার টাকার মতো। বছরে ৬০ হাজার টাকার কিছু বেশি। তাছাড়া প্যান্ডার নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ চিকিৎসা বাবদ খরচ হয় আরও কিছু টাকা।
প্রতিমাসে বিদেশ থেকে প্যান্ডার জন্য মাসিক হোটেল ভাড়া পাঠায় তার মালিক ডা. সিফা। হোটেলে বিড়াল রাখতে প্রতিদিনের জন্য ভাড়া গুণতে হয় ৭শ টাকা। প্যান্ডা যেহেতু বছরব্যাপী থাকছে, তাই তার জন্য ছাড় দিয়ে ভাড়া প্রতিদিন ৪শ টাকা। সেই হিসেবে বিড়ালের জন্য প্রায় দেড় লাখ টাকা রুম ভাড়া পরিশোধ করেছেন ডাক্তার সিফা।
নিয়মিত ফোন করে প্রিয় বেড়ালের খোঁজখবরও রাখেন তিনি। পশু হলেও হোটেলে আদর-সোহাগের কমতি নেই প্যান্ডার। ফারিঘরের ম্যানেজার তোয়ানুর রাহা জানান ২০২৩ সালের মার্চ থেকে এই প্যাট হোটেলে আছে প্যান্ডা এমাস পার হলেও ওর এক বছর হয়ে যাবে। ও হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে পুরাতন গেস্ট এবং সবচেয়ে লম্বা সময়ের গেস্ট। এই হোটেলে বিড়াল রাখতে চাইলে প্রতিদিনের জন্য ভাড়া গুনতে হবে ৭শ টাকা । তবে প্যাকেজে ৭ দিনের বেশি রাখতে তার জন্য ছাড় দিয়ে রাখা হয় ৫৭০ টাকা করে। ১৫ দিনের বেশি সময় রাখলে তার জন্য ভাড়া ৫শ টাকা করে। ১ মাসের বেশি সময় কেউ রাখলে তার জন্য ৪শ টাকা হোটেল ভাড়া দিতে হয়। প্যান্ডা যেহেতু ১ বছর ধরে আছে তার জন্য ৪শ টাকা হারে ভাড়া দিয়ে যাচ্ছেন তার মালিক ডা. সিফা।
প্যান্ডার আরও অন্তত ৩৬টি পোষা প্রাণী রয়েছে ফারি ঘর নামে মিরপুরের এই প্যাট হোটেলে। তাদের দেখাশোনা করেন হোটেল ম্যানেজার তোয়ানুর রাহা। তিনি জানান, বিড়াল বা কুকুরকে বিদেশে নিতে দেশ ভেদে ভ্যাক্সিনেশনের পাশাপাশি লাগে বিশেষ পাসপোর্টও। সেই জটিলতা এড়াতেই অনেকে তার হোটেলে রেখে যান প্রিয় পশুটি।
রাহা জানায় কোথায় গেলে তার প্রিয় পশুটিকে কোথায় রেখে যাবে তা নিয়ে এক সময় দুশ্চিন্তায় থাকতে হতো এখন তার অবসান ঘটেছে। কারণ সব জায়গায় এসব প্রাণী নিয়ে যাওয়া যায় না। তার জন্যই ২০২২ সালে সৃষ্টি হয়েছে ফারিঘরের।
ফারিঘর কুকুর বিড়ালের ফাইভস্টার হোটেল হিসেবে পরিচিত। যেখানে প্রতিটি বিড়ালের জন্য রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পৃথক কেবিন। বিশেষ আদর আপ্যায়নের সঙ্গে আছে ক্যাট ট্রি, কুশন ও লিটারের ব্যবস্থা। কুকুরের জন্য বিছানা বালিশ তো আছেই, আবার প্রাকৃতিক কাজ সারার জন্যও রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
রাহা জানান এই হোটেলে শুধু থাকার ব্যবস্থা আছে তার বিড়াল বা কুকুরের জন্য খাবার দিয়ে যেতে হয় বিড়াল বা কুকুরের মালিককে। কারণ প্রতিটি বিড়াল বা কুকুর আলাদা আলাদা খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত। কেউ প্যাকেট ফুড খায়, কেউ ড্রাই ক্যাট বা ডগ ফুট খায়। কেউ পাউচ খায়। কেউ মাছ খায় কেউ মাংস খায়। তবে যে যে খাবারে অভ্যস্ত তাকে সেই খাবার দিতে হয় না হয় তাদের ফুড পয়জনিং হতে পারে বমি হতে পারে।
তবে এসব বিড়াল অন্যন্য বিড়ালের মতো মাছের কাঁটা খায় না। কাঁচা মাছও খায় না। এদের মাছ বা মাংস সিদ্ধ করে দিতে হয়। স্প্যাম্পু দিয়ে গোসল করাতে হয়। গরমে এসি ছাড়া ঘুমাতে পারে না। শীতে হিটার ব্যবহার করতে হয়। লোম যাতে ঝড়ে না পড়ে তার জন্য ব্যবহার করতে হয় মেডিসিন।
যত্নের কুকুর বা বিড়ালকে রাখার জায়গা না থাকায় এতদিন সমস্যায় পড়তে হতো প্রাণীপ্রেমীদের। ফারিঘরের মতো হোটেল গড়ে ওঠায় এখন স্বস্তি কর্মব্যস্ত মানুষের। সারা দিনের কর্মব্যস্ততায় নিজেদের পোষ্যকে হোটেলে রেখে যান অনেকে। মিরপুরের চিড়িয়াখানা সড়কে কয়েক বছর ধরে গড়ে ওঠা এমন হোটেলের চাহিদাও দিনে দিনে বাড়ছে বলেও জানান প্যাট হোটেল কর্তৃপক্ষ।
মন্তব্য করুন