আমরা এখন ভিক্ষুকের জাতি নই। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নত দেশের পথে প্রবেশ করছে। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসীদের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রবাসী আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে কোন দেশে কী ধরনের কর্মী দরকার সে অনুযায়ী দক্ষ কর্মী প্রেরণের ওপর জোর দিতে হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মী প্রেরণ করে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সাথে খুব দ্রুত আলোচনায় বসব।
রোববার (২১ জানুয়ারি) ঢাকার তেজগাওস্থ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস-২০২৩ উপলক্ষে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপ দলকে পুরস্কার প্রদান ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, এমপি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলাই এখন আমাদের লক্ষ্য। প্রবাসীরা সব সময় বন্ধু হিসেবে দেশের পাশে থেকেছেন। দেশের সিংহভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয় প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ থেকে। অভিবাসী কর্মীদের প্রেরিত অর্থের ওপর প্রণোদনা ২.৫ শতাংশ থেকে বাড়ানোর বিষয়ে সরকার আন্তরিক। প্রবাসীদের যাতায়াতে বিমানবন্দরে সদাচরণ ও নিরাপত্তা প্রদানসহ তাদের মর্যাদা সমুন্নত রাখা উচিত।
অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতায় সরকারি বাঙলা কলেজের বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন ও প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা রানারআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।
সভাপতির বক্তব্যে ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, দেশের কর্মক্ষম ২৫ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান হয় অভিবাসনের মাধ্যমে। বৈদেশিক কর্মসংস্থান না হলে বাংলাদেশে দরিদ্র লোকের সংখ্যা ১০ শতাংশ বেড়ে যেত। অভিবাসী শ্রমিকদের পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। আমরা এখন পর্যন্ত অভিবাসী কর্মীদের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে পারিনি। অভিযোগ রয়েছে বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলো থেকে তারা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না। অথচ আমাদের অভিবাসী কর্মীরা তাদের শ্রমের ঘামে অর্জিত অর্থ দেশে প্রেরণ করে আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে। তাদের সামাজিক মর্যাদা ও স্বীকৃতি প্রদানে সরকারকে আরও বেশি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রেরণকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করা উচিত। বর্তমানে প্রদত্ত রেমিট্যান্সের ওপর প্রণোদনা ২.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা জরুরি। যারা স্বল্প আয়ের অভিবাসী কর্মী তাদের জন্য রেমিট্যান্সের ওপর প্রণোদনা ১০ শতাংশ করা যেতে পারে। আশাকরি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত নতুন প্রতিমন্ত্রী সংসদের প্রথম অধিবেশনে রেমিট্যান্সের ওপর প্রণোদনা বৃদ্ধির প্রস্তাবটি উত্থাপন করবেন। একই সাথে মন্ত্রী অভিবাসী কর্মীদের জন্য সরকারি কর্মকর্তা, শিল্পীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতো অভিবাসী কর্মীদের জন্য স্বল্পমূল্যে জমি, প্লট, ফ্ল্যাট বরাদ্দের উদ্যোগ নেবেন। প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা, ন্যাশনাল রি-ইন্টিগ্রেশন পলিসি গঠনে ভূমিকা রাখবেন। বিদেশে গমনকালীন এবং দেশে আসার সময় অভিবাসী কর্মীরা যাতে বিমানবন্দরে হয়রানীর শিকার না হন সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে।
কিরণ আরও বলেন, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে সক্ষম করে গড়ে তুলতে সরকারের নীতি সহায়তা জরুরি। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে সিআইপির মর্যাদা দেওয়ার উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করলে তারা সম্মানীত বোধ করবেন। অন্যান্য রপ্তানি খাত যেভাবে সুযোগ-সুবিধা পায়, রিক্রুটিং এজেন্সিদেরও সেই ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো স্বল্পসুদে ঋণ, ট্রেনিং সেন্টারের জন্য জমি বরাদ্দসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করলে দক্ষ কর্মী প্রেরণের গতি আরও বাড়ানো যাবে। তাহলে গত বছর আমরা যে ২৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স অর্জন করেছি ভবিষ্যতে তা আরও বেড়ে ৩৫-৪০ বিলিয়ন ডলার করা সম্ভব। নিরাপদ অভিবাসনের মাধ্যমে প্রেরিত কর্মীর জন্য সরকার জন প্রতি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে ইনসেন্টিভ প্রদানের কথা বিবেচনায় নিতে পারে। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক প্রভাব, শ্রমিক অসন্তোষ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ইত্যাদি নানা কারণে পোশাক রপ্তানি খাত সংকুচিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। পাট, চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য থেকে রপ্তানি আয় বাড়ানো যাচ্ছে না। তাই বৈদেশিক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে প্রবাসী আয়ই হবে আমাদের প্রধান ভরসা।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন, বোয়েসেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন, সরকারি বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. শুভময় দত্ত, সিমস্ প্রজেক্ট হেলভেটাস বাংলাদেশের প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল বাসার ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির পরিচালক অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপ দলকে ট্রফি ও সনদপত্রসহ যথাক্রমে নগদ ১ লক্ষ ও ৭৫ হাজার ও শ্রেষ্ঠবক্তাকে ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার প্রদান করা হয়।
মন্তব্য করুন