গত ১ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর প্রাইম জেনারেল হাসপাতালে এক কিশোরীকে আহত অবস্থায় ভর্তি করানো হয়। এ সময় হাসপাতালের ভর্তি রিসিটে রোগীর নাম লেখা হয় সুমাইয়া (১৫) আর পিতার নাম লেখা হয় মোতালেব। নিজেকে রোগীর ভাই পরিচয়দানকারী এক ব্যক্তি সুমাইয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করান। এখনো হাসপাতালের নিভির পরিচর্যা কেন্দ্রে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন সুমাইয়া। তবে সুমাইয়াকে ভর্তির পরপরই উধাও হয়ে যান তার ভাই পরিচয় দানকারী ওই ব্যক্তি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত হাসপাতালে কেউ ওই কিশোরীর খোঁজ নেয়নি, কিংবা তার ভাই পরিচয়দানকারী ওই ব্যক্তিকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভর্তি সময় হাসপাতালে দেওয়া নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে হাসপাতালে বিল বকেয়া পড়েছে লাখ টাকার ওপরে। ফলে খানিকটা বিপাকেই পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ঘটনার অন্তরালের অন্য তথ্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত পহেলা জানুয়ারি সোমবার সকালে হেমায়েতপুরে একটি সিএনজি অটোরিকশা দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে গুরুতর আহত হন সুমাইয়া নামের ওই কিশোরী। তিনি মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। এ ছাড়াও শরীরেও বিভিন্ন জখমের চিহ্ন রয়েছে বলে জানা গেছে হাসপাতাল সূত্রে। দুর্ঘটনায় আহত হলে তাকে প্রথমে নেওয়া হয় স্থানীয় জামাল ক্লিনিকে। সেখান থেকে অবস্থা গুরুতর দেখে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। এই প্রক্রিয়ার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাভার হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক বাবুল আক্তার।
জানতে চাইলে বাবুল আক্তার কালবেলাকে বলেন, ‘সিএনজি অটোরিকশা দুর্ঘটনার কথা শুনে আমি ওখানে যাই। গিয়ে জানতে পারি একটা মেয়ে দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। সে মাথায় আঘাত পেয়েছে। আমি যাওয়ার আগেই তারা ঢাকায় নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স রেডি করে ফেলেছে। আমি তখন রোগীর স্বজন খোঁজ করলে একজন তার বাবা পরিচয় দেন। এখন যেখানে মেয়ের বাবা তার মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছে সেখানে তো সন্দেহ করার কিছু থাকে না। আর রোগীর অবস্থাও খারাপ ছিল, কথা বলতে পারছিল না। যে কারণে আমি সময় ক্ষেপণ না করে তাদের ছেড়ে দিয়েছিলাম মেয়েটার চিকিৎসার জন্য। এরপর আর কেউ এই বিষয়ে কোনো খোঁজ খবর নেয়নি।’
সুমাইয়া প্রাইম হাসপাতালে ভর্তির সময়ের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এসেছে কালবেলার হাতে। সিসিটিভিতে দেখা যায়, ফুল হাতা শার্ট পরিহিত মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি রিসিভশনে কথাবার্তা বলছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে- এ সময় ওই লোক নিজেকে রোগীর ভাই হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। জানতে চাইলে প্রাইম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. মুহাম্মদ গোলাম মোস্তফা কালবেলাকে বলেন, ‘গত সোমবার সকালে আমাদের হাসপাতালে সুমাইয়া নামের ওই রোগীকে ভর্তি করা হয়। এ সময় যে রোগীকে ভর্তিকে করিয়েছে সে নিজেকে রোগীর ভাই বলে পরিচয় দিয়েছিল। তিনি কোনো টাকা পয়শাও দেন নাই। ভর্তির বিলটাও বাকি। আমরা চিকিৎসা করাচ্ছি, আমাদের ফার্মেসি থেকেই ওষুধ দিচ্ছি। ওই রোগী আইসিউতে লাইফ সাপোর্টে আছে। হাসপাতালে প্রায় এক লাখ টাকার ওপরে বিল বাকি পড়েছে। এখন আমরা তার কোনো স্বজন খুঁজে পাচ্ছি না। তারা হাসপাতালে ভর্তির সময় যে তথ্য দিয়েছিল সে ঠিকানায় যোগাযোগ করলেও তারা রেসপন্স করছেন না। রোগীর বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রোগীর অবস্থা খুবই ক্রিটিকাল। সিচুয়েশন আরও খারাপ হচেছ। তবে আমরা চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি, রোগীকে বাঁচাতে আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছি।’
জানা যায়, হাসপাতালে ভর্তির সময় নিজেকে ভাই পরিচয় দেওয়া একই ব্যক্তি পুলিশের কাছে নিজেকে রোগীর বাবা পরিচয় দিয়েছেন। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ ঘটনার সময় উপস্থিত সাভার হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বাবুল আক্তারকে দেখালে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ফলে একই ব্যক্তির একেক সময় একেক পরিচয় দেওয়া নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা।
মন্তব্য করুন