সম্প্রতি ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসায় বালাইনাশকের বিষক্রিয়ায় দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ বলছে, যেই কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়েছে তা বাসাবাড়িতে ব্যবহারের জন্য নয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেছেন, ‘ওই পেস্টিসাইড বড় গার্মেন্টস ও বীজ গুদাম বা অনাবাসিক জায়গায় ব্যবহার করা যায়। কিন্তু ঘরবাড়িতে এ জাতীয় বিষাক্ত আইটেম ব্যবহার করা যায় না।’
যে পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস কোম্পানি বসুন্ধরার ওই বাসায় বালাইনাশক দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিল, তার দুই কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের পর আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য কথা বলেন ডিবিপ্রধান।
ঘটনার প্রেক্ষাপট
বসুন্ধরার আই ব্লকে নতুন বাসার পোকামাকড় তাড়ানোর জন্য বারিধারার ‘ডিসিএস অরগানাইজেশন লিমিটেড’ পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন। ওই কোম্পানির কর্মীরা ২ জুন বাসায় বালাইনাশক দিয়ে যায়। ওই পরিবার বাসায় ওঠার পর সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
৪ জুন সকালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মোবারক হোসেনের ৯ বছর বয়সী ছেলে শাহিল মোবারত জায়ান। পরে রাতে মারা যায় তার ভাই ১৫ বছর বয়সী শায়েন মোবারত জাহিন।
এ ঘটনায় ভাটারা থানায় মামলা করেন বাবা মোবারক হোসেন। মামলায় ৫ জুন রাতে ডিসিএসকর্মী টিটু মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে টাঙ্গাইল ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অভিযান চালিয়ে কোম্পানির চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান এবং এমডি ফরহাদুল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ভাটারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শরীফুল ইসলাম বলেছিলেন, কোম্পানির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে দুই-তিন ঘণ্টা পরে ঘরে ঢুকতে বলেছিল। পরিবারটি নয় ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকেও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়।
বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে হারুন বলেন, ‘ঘরবাড়িতে এগুলো ব্যবহার করলেও ব্যবহৃত সেই আবাসস্থল ৭২ থেকে ৯৬ ঘণ্টা ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হয়। পরে আবার ২৪ ঘণ্টা খুলে রাখতে হয় বিষাক্ত গ্যাস বের হওয়ার জন্য।
‘এই বিষাক্ত আইটেম কোথা থেকে কীভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে, রাসায়নিক অনুপাত সঠিক ছিল কিনা, মানবদেহের জন্য এগুলো কতটা ক্ষতিকর, এ বিষয়গুলোকে যাচাইবাছাই করা হবে।’
কী বলছেন ওই শিশুদের বাবা
সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগ মুহূর্তে হারুনের মোবাইলে ফোন করেন মারা যাওয়া দুই শিশুর বাবা মোবারক হোসেন। লাউডস্পিকার দিয়ে তাদের ওই কথপোকথন সাংবাদিকদের শোনান তিনি। ওই সময় মোবারককে বলতে শোনা যায়, ‘কালো টাকার জোরে এই অপরাধীরা যেন ছাড়া না পান। আমি আইজিপির কাছেও বলেছি। আমার অনুরোধ কর্মচারীকে নয়, কারণ কর্মচারীদের কোনো দোষ নেই। মালিকের বিচার ও শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।’
মোবারক বলেন, ‘আমার দুই সন্তান হারানোর পর জানতে পেরেছি, এই মেডিসিনটা বাসাবাড়ির জন্য নয়। অথচ লিখিত চুক্তি হয়েছে তাদের সঙ্গে, সেখানে এই বিষয়ে কিছুই ছিল না।’
মন্তব্য করুন