রাজধানীর মিরপুরে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে শিশুসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার দিকে মিরপুরে ঢাকা কমার্স কলেজ সংলগ্ন হাজী রোড ঝিলপাড় বস্তিতে এ ঘটনা ঘটে। এতে বিদ্যুতায়িত হয়ে আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন।
মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন কালবেলাকে বলেন, ‘বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে ৪ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে তিনজন একই পরিবারের। নিহতদের মধ্যে এক শিশু, এক নারী ও ২জন পুরুষ। চারজনের মরদেহ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।’
মৃতরা হলেন- নিহতরা হলেন, সিএনজি অটোরিকশাচালক মো: মিজান (৩০), তার স্ত্রী মুক্তা বেগম (২৫), মেয়ে লিমা (৭) এবং তাদের উদ্ধার করতে যাওয়া, মোহাম্মদ অনিক (২০)। মিজানের আরেক ছেলে হোসাইন (০৭ মাস) বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আহতদের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ জানায়, ওই এলাকায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুৎ তার ছিঁড়ে পড়ে। সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় প্রথমে একই পরিবারের ৪ জন বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়। পরে তাদের বাঁচাতে গিয়ে আরেক যুবকও বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মারা যান।
জানা যায়, প্রবল বৃষ্টিতে ওই এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তখন বজ্রপাত হলে পানিতে পরে বিদ্যুস্পৃষ্টে ৫ জন গুরুতর আহত হন। আহতদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠালে ৪ জন মারা যান।
এ দুর্ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, একটি শিশুকে পানি থেকে তোলা হচ্ছে। এ ছাড়া অন্য এক জায়গায় ৩ জন পড়ে আছে।
সন্ধ্যার পর থেকেই বৃষ্টিতে নাকাল রাজধানী ঢাকা। আর এতে রাজধানী বিভিন্ন সড়কে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। ফলে বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চলাচলে দেখা দিয়েছে ধীরগতি। যার পরিণতি ভয়াবহ যানজট। আর এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কর্মক্ষেত্র থেকে ঘরে ফেরা মানুষজন। লম্বা সময় ধরে একই স্থানে আটকে আছে অসংখ্য যানবাহন।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃষ্টি থাকবে আরও দুই দিন। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারী বর্ষণের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, আগামীকাল শুক্র ও শনিবার রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদদের ভাষায় এটি অতিভারী বর্ষণ। সাগরে লঘুচাপের প্রভাবে এই বৃষ্টি হচ্ছে জানিয়ে আগামী দুদিন এমন বর্ষণের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাত ১২টার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক কালবেলাকে জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত সারাদিনের গড় বৃষ্টিপাত ছিল ৯ মিলিমিটার। তবে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ২৩ মিলিমিটার গড় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় লঘুচাপ রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় রয়েছে। এর প্রভাবে আগামী দু’দিন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি (৪৪ মিলিমিটার-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারি (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ হতে পারে।
শুক্রবারের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে।
মন্তব্য করুন