‘মিস আর্থ বাংলাদেশ ২০২০’ বিজয়ী মডেল মেঘনা আলমের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। তার বোনের অভিযোগ, বাসা থেকে মেঘনাকে অপহরণ করা হয়েছে। বুধবার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ অভিযোগ করেন।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় ফেসবুক লাইভে এসে মেঘনা অভিযোগ করেছিলেন, ভাটারা থানা পুলিশ পরিচয়ে কিছু লোক তার বাসার দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকেছে। পরে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মেঘনাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তার বোন তাসিন আফরিন দিয়ানা।
মেঘনা আলমের লাইভ ও তার বোনের পোস্ট ধরে ভাটারা থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, এ ধরনের কোনো অভিযান তারা চালায়নি। ডিএমপির গুলশান বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, থানা পুলিশ নয়, ডিবি এটা নিয়ে কাজ করছে। জানতে চাইলে ডিবি গুলশান বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের কোনো টিম তাকে আটক বা গ্রেপ্তার করেনি।’
কেউ যখন স্বীকার করছে না, তখন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে পরে কথা বলব।’
এদিকে, গত বুধবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে মেঘনা আলমের লাইভ চলার মধ্যেই তার অভিযোগ অনুযায়ী বাসার ‘দরজা ভেঙে’ পুলিশ পরিচয়ধারীরা ভেতরে প্রবেশের পরপরই লাইভটি বন্ধ হয়ে যায়। ১২ মিনিটের বেশি সময় ধরে চলা লাইভটি এরপর ডিলিটও হয়ে যায়। এর আগে মেঘনা আলম লাইভে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশে নিযুক্ত একটি দেশের রাষ্ট্রদূতের নাম উল্লেখ করে দাবি করেন, তিনি হয়রানি করতে পুলিশ পাঠিয়েছেন।
লাইভে মেঘনা জানান, পুলিশ পরিচয়ধারীরা প্রথমে পরিচয় গোপন করে বাসায় প্রবেশের চেষ্টা করে। কিন্তু দরজা না খোলায় একপর্যায়ে তারা নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে তার বাসায় মাদক আছে বলে দাবি করে। এ কথা শুনে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন জানিয়ে লাইভে মেঘনা বলেন, ‘আমি কখনো মাদক নিই না। আমাকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে।’
একপর্যায়ে লাইভে থাকা অবস্থাতেই মেঘনা তার আইনজীবীকে ফোন করেন। পরে আইনজীবীর পরামর্শে তিনি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করেন। সেই কল শেষ হতে না হতেই পুলিশ পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিরা বাসার দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করছে বলে লাইভে জানান মেঘনা। এরপর অন্য একটি কক্ষে গিয়ে তিনি দরজা বন্ধ করে দেন। সেটিও ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে কয়েকজন। তবে দরজা ভেঙে কারা ভেতরে ঢুকেছে, তা লাইভে দেখা যায়নি। ভেতরে ঢুকেই একজন নারী মেঘনার হাত থেকে তার মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেন। এর পরই লাইভটি বন্ধ হয়ে যায়।
পরে বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে মেঘনার বোন তাসিন আফরিন দিয়ানা ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্ট করে বলেন, ‘আমার বোনকে অপহরণ করা হয়েছে। দুই ঘণ্টা ধরে মিসিং।’ বোনের বিষয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত একটি দেশের রাষ্ট্রদূতকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধও জানান তিনি।
এদিকে, সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে নিযুক্ত একটি দেশের রাষ্ট্রদূত তার প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে মেঘনা আলমের সঙ্গে বাগদান সারেন। পরে মেঘনা বিষয়টি জানতে পেরে রাষ্ট্রদূতের স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং এনগেজমেন্টের আংটি ফিরিয়ে দেন।
লাইভে মেঘনার অভিযোগ অনুযায়ী, এরপর থেকে ওই রাষ্ট্রদূত ব্যক্তিগত ও অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি নিয়ে তাকে হয়রানি করছিলেন। এর মধ্যে এক রাতে তার বাসায় ৭-৮ জন ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে তাকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ করেন মেঘনা।
গোয়েন্দা সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিষয়টি এরই মধ্যে ভাটারা থানা পুলিশ এবং গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) নজরদারিতে রয়েছে এবং তারা আইনগত কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এ বিষয়ে আইজিপিও অবগত রয়েছেন।
মন্তব্য করুন