বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতা হত্যার ৫ মামলার আসামি ও আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকের অন্যতম সহযোগী এভোরেজ স্কুলের মালিক গোলাম মোস্তফাকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে তার প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মীরা।
বুধবার (১২ মার্চ) সকালে রাজধানীর লালমাটিয়া থেকে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের সদস্যরা তাকে গ্রেপ্তার করে। তখন কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী পুলিশের ওপর হামলা করে তাকে ছিনিয়ে নেয়। গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর, রামপুরা, বাড্ডা, ক্যান্টনমেন্ট ও চকবাজার থানায় ছাত্র-জনতা আন্দোলনে পৃথক ৫টি হত্যা মামলা রয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুধবার সকাল ১১টার দিকে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য এসে গোলাম মোস্তফাকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় আশপাশে থাকা আট থেক দশজন নিরাপত্তারক্ষী ও আশপাশে কয়েকজন এসে পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা করে। তাদের ওপর হামলার পরও তারা ওই লোককে হাতকড়া পরায়। তখন পুলিশ কার সঙ্গে যেন কথা বলার পর তার হাতকড়া খুলে দেয়। মনে হয়েছে সিকিউরিটি গার্ড ও স্থানীয় কয়েকজন মিলে পুলিশকে মেরে ফেলবে। এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছেন তারা।
পুলিশের কাছে থেকে আসামী ছিনিয়ে নেওয়া নিরাপত্তাকর্মীদের মধ্যে একজন হলেন দেলোয়ার। তিনি বলেন, সকাল ১১ টার দিকে এভোরেজ স্কুলের মালিক আমাদের স্যার গোলাম মোস্তফা স্কুল থেকে বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ীতে উঠছিল। এ সময় পুলিশ এসে তাকে গ্রেপ্তার করতে চেয়েছিল। ওই সময় তার এক হাতে হাতকড়াও লাগায়। সঙ্গে সঙ্গে আমরা যারা ছিলাম সবাই পুলিশকে ঘেরাও করে ধরে তাকে ভিতরে নিয়ে যাই। ওই সময় পুলিশের সঙ্গে আমাদের লোকজনের ধাক্কাধাক্কি হয়। তখন মোবাইলে আমাদের কর্তৃপক্ষ থানার ওসিকে বিষয়টি জানালে পুলিশ তার হাতকড়া খুলে দিয়ে চলে যায়।
ঘটনার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানা বলেন, সকালে মোহাম্মদপুর থানার একটি টিম বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ৫ মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার করতে লালমাটিয়া এলাকায় যায়। আসামি গ্রেপ্তার করার বিষয়টি আমি অবগত ছিলাম। কিন্তু আসামি গ্রেপ্তারের সময় ওই আসামীর লোকজন মব সৃষ্টি করে আমাদের পুলিশের ওপর হামলা করার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ আসামিকে ছেড়ে দিয়ে চলে আসতে বাধ্য হন। বিষয়টি আমি আমার উবর্ধতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। আমরা খুব শিগগিরই আসামির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের অভিযোগ মোহাম্মদপুর থানার ওসির সঙ্গে যোগসাজশে এই হত্যা মামলার আসামিকে গ্রেপ্তারের পরেও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগ ও সার্বিক বিষয়ে জানতে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
এই বিষয়ে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান বলেন, আমাদের একটা টিম একজন আসামিকে ধরতে গেলে সেখানকার সিকিউরিটি গার্ডরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়।এক পর্যায়ে পরিস্থিতি বুঝে সেখান থেকে আমাদের টিম চলে আসে। কেন পুলিশ সদস্যরা এত অল্প লোকবল নিয়ে নিয়ে গেলো, আরও লোক নিয়ে যাওয়া দরকার ছিল কি না সেই বিষয়টা আমরা খতিয়ে দেখছি। সেই সঙ্গে পুলিশের ওপর চড়াও হওয়া সিকিউরিটি গার্ডদের বিষয়টাও খতিয়ে দেখা হবে। এজন্য একজন অতিরিক্ত উপকমিশনারকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি করা হবে।
ঘটনার সময় ওসির ফোন পেয়ে ওই আসামিকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং এটার সঙ্গে তার যোগসাজশ আছে স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ওসির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনা আসলে কী ঘটেছিল সেটা তো ওসিই ভালো বলতে পারবেন। সেই সময় পরিস্থিতি বিবেচনায় টিমের অন্য সদস্যদের সেখান থেকে চলে আসতেও বলতে পারেন।
মন্তব্য করুন