কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২৫, ০৯:০৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মৃত্যু সনদ নিতে ঘুষ, ডিএনসিসির গণশুনানিতে কাঁদলেন ভুক্তভোগী

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের গণশুনানি। ছবি : কালবেলা
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের গণশুনানি। ছবি : কালবেলা

শিক্ষকের মৃত্যু সনদের জন্য সাত হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। এ ছাড়া জন্মনিবন্ধনসহ নানা কাজেও দিতে হয় উৎকোচ। সিটি করপোরেশনকে নিয়মিত রাজস্ব দেন তবুও পান না কাঙ্ক্ষিত সেবা। এমন বঞ্চনার কথা বলতে গিয়ে কাঁদলেন সাত্তার চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি।

নাগরিক সেবা সংক্রান্ত বিষয়ে ১৮টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নিয়ে মঙ্গলবার (১১ মার্চ) গণশুনানির আয়োজন করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সেখানেই কথা বলতে গিয়ে কাঁদেন ডিএনসিসির ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাত্তার চৌধুরী।

মোল্লারটেক, ইরাশাল এবং আজমপুর নিয়ে গঠিত ৫০ নম্বর ওয়ার্ড ২০১৮ সালে ডিএনসিসির সঙ্গে যুক্ত হয়। মঙ্গলবারের গণশুনানিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, বাজার কমিটির নেতা, পাড়া-মহল্লাভিত্তিক সোসাইটি নেতা এবং যুবক, ছাত্র প্রতিনিধি ও স্থানীয় লোকজন অংশ নেন। তারা রাস্তাঘাট, খেলার মাঠ-পার্ক, জলাবদ্ধতা, মশার উপদ্রব, সড়কবাতি না থাকা, জন্ম ও মৃত্যু সনদ নিয়ে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন ডিএনসিসির কর্মকর্তাদের কাছে।

সাত্তার চৌধুরী বলেন, ফি নিয়ে একটি জটিলতার কারণে তিন বছর ধরে ট্রেড লাইসেন্স করাতে পারছেন না তিনি। এ বিষয়ে আঞ্চলিক অফিস থেকে কোনো সহযোগিতাও পাচ্ছেন না। তিনি অভিযোগ করেন, জন্ম নিবন্ধন ও মৃত্যু সনদ নিতে চরম হয়রানির শিকার হতে হয় মানুষকে। সম্প্রতি আমার স্কুলের শিক্ষক মারা গেছেন। সেখানে মৃত্যু সনদ আনতে গিয়ে আমাকে সাত হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। জন্মনিবন্ধন করাতে গেলে ফি লেখা আছে ৫০ টাকা বা ১০০ টাকা। কিন্তু আপনি যান, দেখবেন আপনার কাছে ২০০, ৩০০ টাকা চেয়ে বসে থাকে। এসব কথা বলতে গিয়ে এক পর্যায়ে কেঁদে ফেলেন তিনি।

৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আশরাফুল হক অভিযোগ করেন, সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের কারণে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় হচ্ছে কম। হোল্ডিং ট্যাক্স ঠিকমতো আসছে না, এর মূল কারণ ঘুষবাণিজ্য। এটা বাংলাদেশের একটা মহা সমস্যা। ঘুষবাণিজ্যের কারণে আমরা ট্যাক্স দিচ্ছি না। দেখা গেছে ৩ লাখ টাকার ট্যাক্স ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিলে ১ লাখ ২০ হাজার করে দিচ্ছে।

এ ওয়ার্ডের আরেক বাসিন্দা আমির সোহেল বলেন, গত প্রায় দুই বছর ধরে এ ওয়ার্ডে উন্নয়ন কাজ চলছে, এখনো শেষ হয়নি। ২০০ মিটার রাস্তার কাজ করতে পারলে অসংখ্য মানুষ বড় রাস্তার সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে।

৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের তলনা এলাকার বাসিন্দা আবু সাঈদ মিয়া গণশুনানিতে বলেন, ওয়ার্ডের বাসিন্দা হিসেবে তারা ২০১৮ সাল থেকে সিটি করপোরেশনকে কর দিচ্ছেন। কিন্তু সেবা পাচ্ছেন না। ২০১৮ সাল থেকে আমরা সিটি করপোরেশনে, এখন ২০২৫ সাল চলে। সিটি করপোরেশন ১৮টি ওয়ার্ডে দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন দেখাতে পেরেছে? ট্যাক্স নিচ্ছেন কিন্তু আমাদের কী সেবা দিচ্ছেন?

সাদেক আহমেদ রিপন নামের একজন বলেন, আশকোনার মদিনা টাওয়ার থেকে দক্ষিণখান পর্যন্ত আব্বাসিয়া সড়কের একটি অংশ এখনও পানিতে ডুবে থাকে। পানি এত নোংরা যে লোকজন নামাজ পড়তে যেতে পারছে না, বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না, প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। দক্ষিণখানের কোথাও কোনো পানি নেই। কিন্তু আমাদের ওই রাস্তা এখনও পানির নিচে। বর্ষার আগেই আমাদের ওই সড়কে বর্ষা চলছে। আমরা চাই ওই রাস্তাটি চলাচলযোগ্য করা হোক।

নতুন ওয়ার্ডের বাসিন্দা কাউছার আহমেদ বলেন, বাসাবাড়ির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নামে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন রেটে টাকা নেওয়া হয়। এলাকাভেদে বর্জ্য অপসারণের জন্য এক বাসিন্দাকে কত টাকা পরিশোধ করতে হবে তা চার্ট আকারে এলাকায় টাঙিয়ে দেওয়া উচিত। তাহলে সাধারণ মানুষ জানতে পারবে।

মকিদুর রহমান নামের এক বাসিন্দা বলেন, আব্দুল্লাহপুর খালে ওয়াকওয়ে করে দেওয়া হলে খুব ভালো হয়। এতে করে সাধারণ মানুষ, এলাকাবাসী ভালোভাবে সকালে, বিকেলে হাঁটাচলা করতে পারে। ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অবসরাপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, ৪ নম্বর সড়কের উন্নয়ন কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে। এতে এখানকার বাসিন্দারা খুব সমস্যার মধ্যে রয়েছেন।

গুলশানে ডিএনসিসি নগর ভবনের হলরুমে আয়োজিত গণশুনানি শুরু হয় ১১টায়। গণশুনানিতে উপস্থিত থাকার কথা ছিল ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের। তবে তিনি আসেন দুপুর ১টায়।

অন্য একটা বৈঠকে থাকায় গণশুনানিতে থাকতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন এজাজ। পরে তিনি বক্তব্যে বলেন, ১৮টি ওয়ার্ড যুক্ত হওয়ায় ডিএনসিসির আকার বেড়েছে, কিন্তু লোকবল না বেড়ে আগের চেয়ে বরং কমেছে। এতে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছেন না তারা। আমাদের আগের যে জনবল ছিল, রিটায়ারমেন্ট, মৃত্যু, ডেপুটেশনে অন্য জায়গায় চলে যাওয়ায় তা আগের চেয়ে কমেছে। সীমিত জনবলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত ১৮টি ওয়ার্ড। খাল, ড্রেনেজ ব্যবস্থা যুক্ত হয়েছে। এই অতিরিক্ত দায়িত্ব নিলেও একজন লোকও বাড়েনি। এ কারণে আমাদের জনবল বাড়াতে হবে, যন্ত্রপাতিও বাড়াতে হবে। আমরা ডেপুটেশনে কিছু লোক পাচ্ছি, তবে পুরোপুরি সেবা দিতে হলে লোকবল নিয়োগ করতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মার্কিন সমঝোতায় রাজি, ইউক্রেন পাচ্ছে নতুন সামরিক সহায়তা

কিশোরীকে গণধর্ষণে তিনজনের যাবজ্জীবন

মাদ্রাসাছাত্র হত্যা / সাবেক এমপি সোলাইমান সেলিম ফের রিমান্ডে 

দুবছরে ৫০ লাখ টাকার চারা বিক্রি, তাক লাগালেন ইলিয়াস

সাবেক মন্ত্রী কামাল ইবনে ইউসুফের স্ত্রী মারা গেছেন

আলোচনায় বসব না, যা খুশি করুন : ট্রাম্পকে বললেন পেজেশকিয়ান

মুন্সীগঞ্জে বিদেশি পিস্তলসহ যুবক গ্রেপ্তার

পলকসহ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের দুই নেতা রিমান্ডে 

শিশু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে জেলেকে গণপিটুনি

উদ্ধার অভিযান চলছে / পাকিস্তানে সেই ট্রেন থেকে ১০০ জিম্মি উদ্ধার, নিহত ১৬ বিদ্রোহী

১০

আগামীকাল ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়

১১

চাকরি দিচ্ছে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল, থাকছে না বয়সসীমা

১২

প্রতিদিন বিনামূল্যে ৭০০ রোজাদারের ইফতার

১৩

সড়ক দুর্ঘটনায় শ্রমিক নিহত, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ

১৪

অ্যাপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী মারা গেছেন

১৫

পাকিস্তানে ট্রেনে হামলা / নারী-শিশুদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে হামলাকারীরা

১৬

নারীসহ মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার ইয়াবা সেবনের ছবি ভাইরাল

১৭

আটক ‘ডাকাতকে’ ছাড়িয়ে নিতে ছাত্রদল নেতার থানা ঘেরাও

১৮

লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিকের শিক্ষক সোবহানকে পুলিশে দিলেন শিক্ষার্থীরা

১৯

সীমান্তে আটক ২ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে বিএসএফ

২০
X