জুলাই-আগস্টে বৈষম্যের বিরুদ্ধে দেশে গণবিপ্লব সংঘটিত হলেও সেই বৈষম্য এখনো দূরীভূত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা। তারা বলেন, ৫ আগস্টের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন নির্যাতন-নিপীড়ন ও বৈষম্যের শিকার। এই সংকট উত্তরণে আমাদের সবাইকে একতাবদ্ধ থাকতে হবে। বঞ্চনা-বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের কথা বলতে হবে, সোচ্চার হতে হবে।
শনিবার (৮ মার্চ) ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর পরিবার দিবসের অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন। মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে এ অনুষ্ঠান হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ মহারাজ বলেন, মহানগর পরিবার দিবস উদযাপন, এটি একটি অভিনব পরিকল্পনা। এ দিনটিতে ঢাকেশ্বরী মায়ের কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের পরিবারগুলোকে আরও ঐক্যবদ্ধ করেন এবং সেই ঐক্যের পরিসর যেন বৃদ্ধি করেন।
জগদ্বন্ধু মহাপ্রকাশ মঠের অধ্যক্ষ কান্তিবন্ধু ব্রহ্মচারী বলেন, আজ (শনিবার) আন্তর্জাতিক নারী দিবস। আমি বলব, নারীর প্রতি বেশি সম্মান দেখিয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়। আমরা যত পূজা করি, তার মধ্যে দেবীর সংখ্যা বেশি, দেবতার সংখ্যা কম। নারীদের অসম্মান করাটা অত্যন্ত দূষণীয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু আন্দোলনের সফলতাকে আজ কলুষিত করা হচ্ছে। হিন্দু সম্প্রদায় আজ পদে পদে বৈষম্যের শিকার, নির্যাতনের শিকার। তাদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা দেওয়া হচ্ছে, যেগুলো মিথ্যা মামলা। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন আজ পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের অনেকে বাড়িঘরে থাকতে পারছেন না। মিডিয়া, প্রশাসনসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে অপসারণ করা হচ্ছে। শিক্ষকরা আজ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারেন না। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, আমরা সবাই এক পরিবার। আমরাও তাই মনে করি।
তিনি আরও বলেন, আমরা এ দেশে জন্মগ্রহণ করেছি। পরিবার-পরিজন নিয়ে আমরা এ দেশে থাকতে চাই, এ দেশেই আমরা থাকব। এখন থেকে অত্যাচার-নির্যাতন, বঞ্চনা, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের কথা বলতে হবে, সোচ্চার হতে হবে।
জুলাই বিপ্লবে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকও অংশীদার ছিল উল্লেখ করে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন মজুমদার বলেন, ক্ষমতার জন্য শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ধরে এ দেশের হিন্দুদের ট্রাম্পকার্ড হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এখন থেকে কাউকে আর হিন্দুদের নিয়ে ট্রাম্পকার্ড খেলতে দেওয়া হবে না।
মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শুভাশীষ বিশ্বাস সাধনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাপস কুমার পাল, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সাবেক সভাপতি বি এম চ্যাটার্জি, পূজা কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুবল সাহা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, আমরা আজ মহাসংকটকাল অতিক্রম করছি। ৫ আগস্টের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট হয়েছে। এখন চলছে নীরব চাঁদাবাজি। সংকট উত্তরণে আমাদের সবাইকে একতাবদ্ধ থাকতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় আজ ভালো নেই। তারপরও আমরা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর আমরা ভেবেছিলাম, এবার পরিবর্তন আসবে। কিন্তু এবারও আমরা বৈষম্য, নির্যাতনের শিকার। একটা কথা মনে রাখতে হবে, হিন্দু সম্প্রদায়কে বাদ দিয়ে দেশের অগ্রগতি হবে না।
অনুষ্ঠানে এবিসি গ্রুপের চেয়ারম্যান সুভাষ চন্দ্র ঘোষকে এই বছর গুণীজন সম্মাননা দেওয়া হয়। এ সময় নিম চন্দ্র ভৌমিক, জে এল ভৌমিক, অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, মিলন কান্তি দত্ত, জয়ন্ত সেন দিপু, নারায়ণ সাহা মনি, বাবুল দেবনাথ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভা ছাড়াও দিনব্যাপী বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা, বৃত্তি প্রদান এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে মহানগর পরিবার দিবস উদযাপিত হয়েছে।
মন্তব্য করুন