র্যাবের পোশাক পরিধান করে র্যাব পরিচয় দিয়ে ডাকাতির ঘটনায় ৫ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নিউমার্কেট থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. আল আমিন হাওলাদার (৪০), মো. ওমর ফারুক (৩৪), মো. ফারুক বেপারী (৩৯), মো. শহিদুল ইসলাম শেখ (৪১) ও মো. মানিক (২৭)।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি নিউমার্কেট থানাধীন হাতিরপুল রোডস্থ বাসা নং-১৬৯ এর সামনে রাত আনুমানিক ৩টায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মো. ফারুক মিয়া (৫৫) নিউমার্কেট থানায় মামলা করেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা নিউমার্কেট থানার এসআই মোল্যা শাহাদাৎ সঙ্গীয় অফিসার ফোর্স কর্তৃক ডিসি রমনাসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় তথ্যপ্রযুক্তিগত আলামত পর্যালোচনা করে আসামিদের গ্রেপ্তার করে।
ডাকাতির সময়কালের সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ, ডাকাতিতে ব্যবহারকৃত মাইক্রোবাস, ডাকাতিকালে ব্যবহৃত র্যাবের কোটি, হ্যান্ডকাফ, ডাকাতিকালে ব্যবহৃত হকিস্টিক ও বেতের লাঠি, ডাকাতি মালামালের ব্যবহৃত নগদ ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নিউমার্কেট থানা সূত্রে জানা যায়, মামলার বাদী মো. ফারুক মিয়া (৫৫) গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দুবাই থেকে রওনা হয়ে ১৮ ফেব্রুয়ারি আনুমানিক রাত ২টায় ঢাকা এয়ারপোর্টে পৌঁছে এয়ারপোর্ট থেকে বাদীর বাসার উদ্দেশ্যে একটি সাদা প্রাইভেটকার ভাড়া করে তার সঙ্গে থাকা বিদেশ থেকে আনা ১০০ (একশ গ্রাম) ওজনের কয়েকটি স্বর্ণের চুড়ি, যার বাজার মূল্য আনুমানিক ১১ লাখ নব্বই হাজার টাকা, ০২টি স্যামস্যাং এস-২৫ আল্ট্রা মোবাইল ফোন, যার বাজার মূল্য ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ০১টি আইফোন-১২, যার বাজার মূল্য ৪০ হাজার টাকা, একটি অ্যাপেলের ম্যাটবুক যার বাজার মূল্য ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা, ০১টি আইপ্যাড, যার বাজার মূল্য ১৪ হাজার টাকা, অ্যাপেলের ০১টি ঘড়ি, যার বাজার মূল্য ৪০ হাজার টাকা, ০৩টি কম্বল, যার বাজার মূল্য ১৩ হাজার টাকা ও আনুষঙ্গিক কসমেটিকস, খাবরসহ বিভিন্ন ধরনের মালামাল যার বাজার মূল্য আনুমানিক এক লাখ টাকা, সর্বমোট ১৯ লাখ সত্তর হাজার টাকাসহ বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হন।
বাদী একই দিন অর্থাৎ ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক ৩টায় বাদীর বাসা নিউমার্কেট থানাধীন হাতিরপুল রোডের বাসা নং-১৬৯ এর সামনে উপস্থিত হলে বাদীকে অনুসরণ করা একটি কালো রঙের নোহা গাড়ি বাদীর গাড়ির পথরোধ করে।
পথরোধ করা গাড়ি থেকে র্যাবের পোশাক পরিহিত ০৫/০৬ জন লোক নেমে নিজেদের র্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে বাদীকে জোর পূর্বক গাড়ি থেকে টেনেহিঁছড়ে নামায়। বাদীসহ সঙ্গে থাকা উপরোক্ত মালামাল তাদের গাড়িতে নিয়ে চলে যায়। বাদীকে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে। বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। একই দিন ভোর আনুমানিক সাড়ে ৪টায় সঙ্গে থাকা মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে বাদীকে হাতিরঝিল এলাকায় নামিয়ে দেয়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা সঙ্গীয় অফিসার ফোর্স কর্তৃক ডিসি রমনাসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় তথ্যপ্রযুক্তিগত আলামত পর্যালোচনা করে আসামি মো. মানিক (২৭) কে নিউমার্কেট থানাধীন এ্যালিফ্যান্ট রোড বাটা সিগন্যাল মোড়ের পাকা রাস্তার ওপর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামি মো. আল আমিন হাওলাদার (৪০) পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানাধীন কাছিপাড়া গ্রামস্থ আসামির নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্য মোতাবেক বর্ণিত মামলার ঘটনায় তার সঙ্গে অপরাধের সঙ্গে জড়িত আসামি মো. ওমর ফারুককে (৩৪) বরিশাল দপদপিয়া সেতুর টোল প্লাজা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ওমর ফারুক ও আল আমিন হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে তাদের পুলিশ রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে দেওয়া তথ্য মোতাবেক আসামি মো. ফারুক বেপারী (৩৯) কে রামপুরা থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আসামি মো. ফারুক বেপারীর তথ্য ও শনাক্তকরণ মতে আসামি মো. শহিদুল ইসলাম শেখকে (৪১) রামপুরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনাস্থলে ঘটনার সময় উপস্থিত থেকে অপরাধ সংঘটনের কথা স্বীকার করে।
তাদের দেওয়া তথ্য মোতাবেক লুণ্ঠিত আরও মালামাল উদ্ধার ও অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার প্রচেষ্ট অব্যাহত আছে। উক্ত আসামিদ্বয়কে গ্রেপ্তারকালীন সময়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সূত্রোক্ত মামলার ঘটনার দিন আসামিদ্বয় এবং অজ্ঞাতনামা আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে তারা ওই স্থানে ডাকাতি সংঘটন করে বাদীর মালামাল ডাকাতি করে নিয়ে যায়।
আসামিদ্বয় সূত্রোক্ত মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত আছে মর্মে যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। মামলাটি তদন্তাধীন। তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
মন্তব্য করুন