রাজধানী ঢাকার মহাখালী ফ্লাইওভারের ঠিক উপরে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচে বিমে আটকে পড়া একটি বিড়াল, যে ছিল একেবারে অসহায় অবস্থায়, অবশেষে উদ্ধার হলো এক সাহসিক এবং মানবিক অভিযান থেকে। এটি ছিল শুধু একটি প্রাণী উদ্ধার নয়, বরং মানবতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
শনিবার (১ মার্চ) সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া এই উদ্ধার অভিযানটি ছিল এক চ্যালেঞ্জিং, অবিস্মরণীয় এক অভিজ্ঞতা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করলেও, বিড়ালটি প্রথমে ভয় পেয়ে বিমের প্রান্তে চলে যায়, যা আরও একধাপ জটিলতা তৈরি করেছিল।
কিন্তু এরপরই স্বেচ্ছাসেবী আরিজ উল মুলকের নেতৃত্বে একদল সাহসী যুবক তাদের অভিযান আরও জোরালো করে তোলে। তারা বিশেষ ধরনের খাঁচা (ফাঁদ) নিয়ে আসে এবং বিমের উপরে খাঁচায় খাবার রেখে বিড়ালটিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন।
রাতের অন্ধকারে, তাদের অধ্যবসায় এবং পরিশ্রম অবশেষে ফল দেয়। রোববার (২ মার্চ) ভোর সাড়ে ৫টায়, খাবার রাখা খাঁচায় বন্দি হয়ে বিড়ালটি নিরাপদে উদ্ধার করা হয়।
ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উদ্ধারকারীদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এটি নিঃসন্দেহে একটি মহৎ উদ্যোগ। আপনারা শুধু একটি প্রাণী উদ্ধার করেননি, বরং মানবতার জয়গানও গাইছেন। সমাজের সুনাগরিক হিসেবে আপনাদের ভূমিকা অনুপ্রেরণার উৎস।
এদিকে, আরিজ উল মুলক, যিনি নিয়মিতভাবে বিপদগ্রস্ত প্রাণীদের উদ্ধার করেন, তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, আমি সবসময় বিপদে পড়া প্রাণীদের সাহায্য করি, কারণ আমি বিশ্বাস করি, প্রাণী ও মানুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই—প্রত্যেকেই সম্মান পাওয়ার যোগ্য।
বিড়ালটি উদ্ধার হওয়ার পর, তাকে বারিধারার একটি ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং মোহাম্মদপুরের একজন স্বেচ্ছাসেবক তা লালন-পালনের জন্য গ্রহণ করেন। বর্তমানে, বিড়ালটি পুরোপুরি সুস্থ এবং নিরাপদ রয়েছে।
এই উদ্ধার অভিযানটি শুধু প্রাণীপ্রেম এবং সাহসিকতার একটি নজির নয়, বরং এটি আমাদের সকলের জন্য এক শক্তিশালী বার্তা—প্রাণীও আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যখন মানবতা ও সাহস একত্রিত হয়, তখন পৃথিবীটা আরও সুন্দর হয়।
মন্তব্য করুন