দুই কোটি সম্মানিত নগরবাসীকে নিরাপদ রাখা হচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মূল দায়িত্ব। এ মহান দায়িত্ব পালনে নগরবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী, এনডিসি।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’-এ সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
বক্তব্যের শুরুতে জুলাই-আগস্টে যেসব ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছেন ও আহত হয়েছেন তাদের সবার প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, এ আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তথা বাংলাদেশ পুলিশ নতুনভাবে মানুষকে সেবা দেওয়ার কাজ শুরু করেছে। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কিছু সদস্য পেশাদারিত্বের বাইরে গিয়ে কাজ করেছে। এজন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ঢাকা তথা দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ওই সময় পেশাদারিত্বের বাইরে গিয়ে যারা কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, এই ঢাকা শহরে প্রায় দুই কোটি মানুষের বসবাস। পৃথিবীতে এতো ঘনবসতিপূর্ণ শহর খুব কমই রয়েছে। নানাবিধ সমস্যার এ ঢাকা শহরে সীমিত সম্পদ ও পুলিশ সদস্য নিয়ে দুই কোটি মানুষের নিরাপত্তা বিধান করতে হয়। আমার ও আমার সহকর্মীদের পবিত্র দায়িত্ব হলো ঢাকাবাসীকে নিরাপদে রাখা।
কমিশনার বলেন, জুলাই-আগস্টের পরে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুলিশ ট্রমার মধ্যে পড়ে যখন অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় তখন ঢাকা শহরে ডাকাতি ও লুটপাট বেড়ে গিয়েছিল। তখন রাতে বিভিন্ন মহল্লায় যুবকদের সাথে মহিলা ও বৃদ্ধদের লাঠি নিয়ে পাহারা দিতে দেখা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত সব পুলিশ সদস্যের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ঢাকা মহানগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সেই অবস্থা থেকে অনেকটাই উত্তরণ করা সম্ভব হয়েছে।
ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কথা উল্লেখ করে কমিশনার বলেন, একটি আদর্শ শহরে ২৫ শতাংশ রাস্তা থাকা উচিত কিন্তু ঢাকা শহরে সেখানে রয়েছে মাত্র সাত শতাংশ। ঢাকার সীমিত রাস্তায় যন্ত্রচালিত গাড়ির সঙ্গে সাধারণ রিকশা চলে। সে সঙ্গে এখন অতিরিক্ত সংখ্যায় অটোরিকশা যোগ হয়েছে। সাধারণ রিকশার তুলনায় অটোরিকশার আকার দ্বিগুণ হওয়ায় ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এগুলো চলাচলে একটি সমন্বিত ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, যারা রাস্তা ব্যবহার করেন, তারা সড়ক পরিবহন আইন মানতে চান না। অন্যদিকে হকাররা ফুটপাত দখল করে রেখেছে। এ অবস্থায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জটিল। এমনকি যেখান দিয়ে নগরবাসী হাঁটেন, সে রাস্তায়ও মোটরসাইকেল চালকরা মোটরসাইকেল চালান। এ অবস্থার উত্তরণের জন্য নগরবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। রাস্তায় গাড়ির ব্যবহার একটু হলেও কমাতে সন্তানের স্কুল এবং কর্মক্ষেত্রের আশপাশে বসবাস করার আহ্বান জানান তিনি।
সবার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা মহানগরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরাতে বড় অবদান রাখবে বলে মনে করেন ডিএমপি কমিশনার। এ ছাড়া একটি মোটরসাইকেলে দুজনের বেশি উঠলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা করেন তিনি।
কমিশনার বলেন, ছিনতাই প্রতিরোধে ডিবি ও থানা পুলিশকে সক্রিয় করা হয়েছে। ডিএমপির প্রতিটি থানায় মতবিনিময় সভা করা হচ্ছে। আমরা ঢাকাবাসীর মতামত নিয়ে সর্বোত্তম পুলিশি সেবা দিতে চাই। অনেক ক্ষেত্রে ঢাকাবাসীর সহযোগিতা ছাড়া আমাদের কাজ করা দুরূহ হয়। চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সমাজের সবাই মিলে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি এবং কাউকে চাঁদা না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন কমিশনার।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা ও পুলিশি সেবা সংক্রান্ত যে কোনো বিষয়ে নগরবাসীর অভিযোগ জমা দেওয়ার জন্য খুব শিগগিরই একটি অভিযোগ বক্স খোলা হবে। এ ছাড়া মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে সবার পরামর্শ নেওয়া হবে। পুলিশি সেবাপ্রাপ্তি দ্রুততম সময়ে নিশ্চিত করতে একটি বিশেষ টিম ঘোষণার কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার।
মিট দ্য প্রেসে অ্যাডিশনাল পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. ইসরাইল হাওলাদার, অ্যাডিশনাল পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস্, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) হাসান মো. শওকত আলী, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান পিপিএম (বার), অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এসএন মো. নজরুল ইসলাম, পিপিএম-সেবাসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন