দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তীয় অকৃষি খাসজমির হস্তান্তর প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন পুরানা পল্টন ও সেগুনবাগিচা খাসমহল ভূমির ভুক্তভোগী মালিক কমিটি। তারা ২০০৫ ও ২০১১ সালের পরিপত্র বাতিল করে ১৯৮৫ সালের প্রজ্ঞাপন বহালের মাধ্যমে নামজারি ও খাজনা গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি আবু খালিদ মোহাম্মদ বরকতউল্লাহ লিখিত বক্তৃতায় বলেন, ১৯২৪ সালে পল্টন ও সেগুনবাগিচাসহ ঢাকার আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বসতি গড়ে তোলার জন্য অকৃষি পতিত জমিসমূহ দীর্ঘমেয়াদি লিজ বরাদ্দ দেন তৎকালীন সরকার। তারপর ১৯৫৪ সালে ভূমি মালিকরা প্রথমবার তা নবায়ন করেন। পরে ১৯৮৫ সালে একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানানো হয় পূর্বতন খাসমহলের চিরন্তন নবায়নযোগ্য দীর্ঘমেয়াদি লিজকৃত অকৃষি খাস জমিসমূহ স্থায়ী বন্দোবস্ত বলে বিবেচিত হবে এবং ভবিষ্যতে তা আর নবায়নের প্রয়োজন হবে না। পরে ২০ বছর পর ভূমি মালিক ও সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর সমূহের অজ্ঞাতসারে ১৯৮৫ সালের প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করে ২০০৫ সালে আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। অথচ এই ২০ বছরে প্রায় প্রতিটি ভূমি মালিকানা পরিবর্তনসহ বিভিন্নভাবে বিবর্তন করা হয়।
কিন্তু যারা লিজ নবায়নের জন্য আবেদন করেছিলেন, তা আর নবায়নের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের লিখিতভাবে জানানো হয়। সিটি জরিপের সময় এসএ ও আরএস নামজারি পর্চা মূলে জমির মালিকের নামে রেকর্ডমূলে ভূমি বা ফ্ল্যাট মালিকগণ নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করে নির্মিত ফ্ল্যাট বা অফিসসমূহ সাফকবলা দলিলের মাধ্যমে যথারীতি বেঁচা-কেনাসহ যাবতীয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলে এবং সরকারের পক্ষ থেকে ওজর আপত্তি ছাড়াই রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়ে আসছে। এসব ভূমিতে আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য রাজউক থেকে নকশা অনুমোদনের সময়েও কোনরূপ আপত্তি করা হয়নি।
এরপর ২০১১ সালে ২টি সম্পূরক পরিপত্রের মাধ্যমে সরকার উক্ত জমির খাজনা গ্রহণ এবং সকল ধরনের হস্তান্তর প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়; ফলে লিজ সূত্রে ভূমি মালিকগণের নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ায় আমরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছি। তাছাড়া বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার বর্তমানে অনেকে গোপনে স্টাম্পের মাধ্যমে বেচা-কেনা করছে বলে জানান তারা।
ভুক্তভোগী মালিকরা জানান, ১৯৮৫ সালের পরিপত্র বাতিল করায় ভূমি, ফ্ল্যাট, অফিস স্পেস বিক্রি না হওয়ায় অনেক ভূমিতে ডেভলপার কর্তৃক ভবন নির্মিত হয়, কিন্তু রেজিস্ট্রেশন কার্য্য বন্ধ থাকায় ফ্ল্যাট ক্রেতাগণ অর্থ পরিশোধ করছেন না, ব্যাংক বা অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিকট থেকে গৃহায়ণ ঋণ পাওয়া যাচ্ছেনা। যার ফলে প্রজেক্টের কাজও শেষ হচ্ছে না। এতে ভূমির মালিক বাড়ি ছাড়া হয়ে ভাড়া আয় হতে বঞ্চিত, ফ্ল্যাট মালিকগণ তাদের জীবনের সঞ্চয়টুকু ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ করেও ফ্ল্যাট পজিশন বুঝে পাচ্ছেন না। আবার কেউ কেউ ফ্ল্যাট বুঝে পেলেও রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় নামজারি-খাজনা করাতে পারছেন না।
২০০৫ ও ২০১১ সালে জারিকৃত পরিপত্রের মাধ্যমে তৎকালীন সরকার দেশের বিপুল সংখ্যক নাগরিককে পারিবারিক, সামাজিক, আর্থিক ও বিভিন্ন আইনী জটিলতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। মতিঝিল, পল্টন, সেগুনবাগিচা, রমনা, কাকরাইল, ওয়ারী, গেন্ডারিয়াসহ ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকায় সরকারের দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তীয় খাসমহল ভূমির মালিকগণ চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন, বর্তমানে নিজের ভিটি-ভূমিতেই উদ্বাস্তু অবস্থায় আছেন। অবিলম্বে ২০০৫ সাল ও ২০১১ সালের সকল পরিপত্র বাতিল করে ১৯৮৫ সালের প্রজ্ঞাপনটি বহাল রেখে অত্র লিজকৃত ভূমি সমূহের নামজারি ও খাজনা পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করে নির্বাহী আদেশ প্রদানের মাধ্যমে এ বিশাল ভুক্তভোগী জনমানুষকে অসহায় অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে তারা ছাত্র জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে গঠিত বর্তমান সরকারের প্রতি দাবি জানান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের সহসভাপতি আবু জামাল সাঈদ আহমেদ, খন্দকার আবদুর রব ও হাজি ওসমান গণি, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম এবং সহসাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
মন্তব্য করুন