বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেছেন, গত ৭ দশকে কেয়ার বাংলাদেশে বৃহৎ পরিসরের কর্মসূচি বাস্তবায়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, যা লাখ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকার পরিবর্তন ঘটিয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন মানুষের জীবনকে কেয়ার প্রভাবিত করেছে। এটি একটি অবিশ্বাস্য অর্জনের রেকর্ড।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) সকালে ঢাকার রেডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে আন্তর্জাতিক মানবিক সাহায্য সংস্থা কেয়ার বাংলাদেশের ৭৫ বর্ষপূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিনব্যাপী বর্ষপূর্তি উদযাপন শুরু হয়। পরে বিকেলে অতিথিরা দুটি মতবিনিময় সভায় আলোচনা করেন।
কেয়ার বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর রাম দাশ প্রতিষ্ঠানটির সমৃদ্ধ ইতিহাস, বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে বর্তমান বাংলাদেশে কেয়ার ১৯৪৯ সালে যাত্রা শুরু করে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে কেয়ার বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশ সরকারের বিশ্বস্ত উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দাতা সংস্থার প্রতিনিধি, উন্নয়ন সহযোগী, অংশীদার এবং বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা যোগদান করেন।
প্রথিতযশা অতিথিরা উন্নয়ন জগতে তাদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনায় একটি উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা যোগায়।
কেয়ারের প্রেসিডেন্ট এবং সিইও মিশেল নান একটি ভিডিও বার্তায় সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, কেয়ার-এর সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন আমাদের সামনে এমনভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছে, যা পরিবর্তন ঘটানোর অন্যরকম একটি মান স্থাপন করেছে যা ভবিষ্যতেও করবে। সামনে আরও বড় পরিসরে আমাদের কার্যকলাপ চলমান থাকবে।
ইউএসএআইডির মিশন ডিরেক্টর রিড এসলিম্যান বলেন, ইউএসএআইডি কেয়ার বাংলাদেশের সঙ্গে এই অসাধারণ যাত্রায় অংশীদার হতে পেরে গর্বিত। উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পথ সুগম করার একটি অনন্য সুযোগ রয়েছে। যা কেবল টেকসই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সম্ভব।
এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘৭০-এর দশক থেকে আমাদের মাঠপর্যায়ে এবং কমিউনিটিতে কেয়ারের উপস্থিতি স্পষ্ট, যা তাদের উল্লেখযোগ্য সড়ক নির্মাণ উদ্যোগের মাধ্যমে শুরু হয়। কেয়ার-এর কাজ এবং এর আইকনিক যানবাহন বাংলাদেশে উন্নয়নের প্রতি তাদের দীর্ঘস্থায়ী প্রতিশ্রুতির প্রতীক। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, মানবিক সহায়তার বাইরে, কেয়ার বাংলাদেশ দারিদ্র্য হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ু অভিযোজন এবং প্রান্তিক জনগণের সহায়তায় নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে। এই বড় অর্জনের জন্য অভিনন্দন! দুপুরের পর দুটি সমসাময়িক সভায় ‘জলবায়ু সহনশীলতা’ এবং ‘তৈরি পোশাক খাতে নারীদের জন্য টেকসই ভবিষ্যৎ’ নিয়ে আলোচনা হয়।
কেয়ার এশিয়ার রিজিওনাল ডিরেক্টর রমেশ সিং তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, কেয়ার-এ আমাদের লক্ষ্য হলো দারিদ্র্য নির্মূলের জন্য একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক গঠন করা, যা আমাদের সাফল্যকে বাংলাদেশ থেকে শুরু করে এশিয়া অঞ্চল এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হবে। কেয়ার বাংলাদেশ বর্তমানে একাধিক ক্ষেত্রে কাজ করছে যেমন- স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, নারী ও যুব ক্ষমতায়ন, হিউম্যানিটারিয়ান অ্যান্ড ক্লাইমেট অ্যাকশন এবং শিগগিরই খাদ্য ও কৃষি ব্যবস্থায়ও কাজ করার লক্ষ্য রয়েছে। কেয়ার বাংলাদেশের ২০৩০ কর্মকৌশল পরিকল্পনায় (কান্ট্রি প্রোগ্রাম স্ট্রাটেজি) চারটি প্রভাবক নির্ধারণ করা হয়েছে। যা হলো- লৈঙ্গিক সমতা, স্থানীয় নেতৃত্ব, বাজারভিত্তিক পন্থা এবং সহনশীলতা উন্নীতকরণ। যার মাধ্যমে কেয়ার বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ১৫ মিলিয়ন বা ১.৫ কোটি মানুষ বিশেষ করে নারীর নেতৃত্ব এবং সহনশীল (রেজিলিয়েন্ট) জীবন নিশ্চিত করা লক্ষ্য স্থির করেছে।
কেয়ার ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা একটি নেতৃস্থানীয় মানবিক সংস্থা। সংকটময় সময়ে জরুরি সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে কেয়ার-এর সাত দশকেরও বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমাদের জরুরি কার্যক্রমসমূহ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগণ, বিশেষ করে নারীদের চাহিদার উপর অগ্রাধিকার দেওয়া। ২০২২ অর্থবছরে কেয়ার ৬৯১টি প্রকল্পের মাধ্যমে বিশ্বের ৬৮টি দেশে কাজ করেছে এবং ২ কোটিরও (২৫.৪ মিলিয়ন) বেশি মানুষের কাছে পৌঁছেছে। ২০২৩ অর্থবছরে কেয়ার বাংলাদেশ ৪৮টিরও বেশি প্রকল্পের মাধ্যমে ৫৩ লাখ (৫.৩ মিলিয়ন) মানুষের কাছে পৌঁছেছে যেখানে ৬৪ শতাংশ ছিল নারী। ব্যাপ্তির দিক থেকে কেয়ার দেশগুলোর মধ্যে কেয়ার বাংলাদেশ দ্বিতীয়। সর্বোচ্চ অবদানকারী দেশ হিসাবে স্থান পেয়েছে।
মন্তব্য করুন