রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, ভাঙাচোরা সড়ক বছরের পর বছর সংস্কার না করায় নাকাল রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণখানবাসী। এ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে রাস্তায় খানাখন্দ ও ভাঙাচোরার কারণে কোনো গাড়ি চলাচল করতে পারে না। গাড়ি না পেয়ে বাধ্য হয়ে গর্ভবতী নারীকে নিয়ে হেঁটে হাসপাতালে যাচ্ছিল তার পরিবারের সদস্যরা। এ সময় গর্ভবতী নারী অসুস্থ হয়ে রাস্তায় সন্তান প্রসব করে।
বুধবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার মানববন্ধন করেছে উত্তর ও দক্ষিণখানবাসী। দ্রুত রাস্তা সংস্কার করে দুর্ভোগ নিরসন না করা হলে উত্তর সিটি ঘেরাও করার হুমকি দেন মানববন্ধনে আসা ব্যক্তিরা।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর দক্ষিণ খান বাজারে দক্ষিণ খান ও উত্তরখানবাসীর আয়োজনে রাস্তার উন্নয়ন কাজ দ্রুত শেষ করা ও দুর্ভোগ নিরসনে মানববন্ধন আয়োজন করা হয়। এতে এলাকাবাসী তাদের বক্তব্যে এসব অভিযোগ ও ভোগান্তির কথা তুলে ধরে বলেন, বিকল্প সড়ক না রেখে একই সঙ্গে সব রাস্তার উন্নয়ন কাজ শুরু করায় সম্পূর্ণরূপে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন দক্ষিণখান ও উত্তরখানের বাসিন্দারা। সড়ক খুঁড়ে দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় বৃষ্টি ও ড্রেনের পানিতে ভোগান্তির চরম সীমায় এই দুই এলাকার ৭টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। কোনো রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেয়ার রাস্তা অবশিষ্ট নেই। রাস্তার মধ্যে গর্ভবতী মহিলাদের সন্তান প্রসবের মতো মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটেছে।
এলাকার বাসিন্দারা আরও বলেন, এখানে যে কয়েকটি ক্লিনিক রয়েছে সেখানে ডাক্তার আসতে না পারায় চিকিৎসাসেবা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। অসুস্থ রোগী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার রাস্তা চাই, ড্রেনের পানিতে সাঁতার কাটতে চাই না। এই ভোগান্তির শেষ কবে- এমন ব্যানার, ফেস্টুন ,প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন হাজারো মানুষ।
মানববন্ধনে দক্ষিণ েও উত্তরখান সচেতন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ইয়াছিন রানা বলেন, ২০১৬ সালে এই এলাকা ঢাকা উত্তর সিটির আওতায় আসার পর থেকে পরিপূর্ণরূপে উন্নয়ন কাজ বন্ধ ছিল। সিটি নির্বাচনের ছয় বছর পরে এসেও এখানের চিত্র বদলায়নি। বৃষ্টি হলেই পুরো এলাকা তলিয়ে যায়, হাঁটার মতো অবস্থা থাকে না। সড়ক খনন নীতিমালা না মেনে সব রাস্তা এক সঙ্গে কাটায় স্বাভাবিকভাবে মানুষ যাতায়াত করতে পারে না। অফিস করতে উত্তরা বা বিমানবন্ধরে যেতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। কয়েক কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে পাড়ি দিতে হয়। ১০ টাকার অটো ভাড়া ৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক এলাকায় কোনো গাড়িই চলাচলের সুযোগ নেই। বৃষ্টি হলেই রিকশা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
মানববন্ধনে দক্ষিণ খান ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান খলিল মোল্লা বলেন, আমাদের দুর্ভোগ ভোগান্তি নিয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনের কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। না হয় ভোগান্তি নিরসন হচ্ছে না কেন। সব রাস্তা একই সময়ে কেটে ফেলা কোনো নীতিমালার মধ্যে পড়ে তা জানতে চান তিনি। আনোয়ার হোসেন জমিদার বলেন, পদ্মা নদীতে যদি সেতু করা যেতে পারে তাহলে দক্ষিণ ও উত্তরখানের রাস্তা করতে এত দেরি হবে কেন। ড্রেনের পাইপ বসানোর পর কিউরিংয়ের জন্য ২৯ দিন রাখার কথা থাকলেও ৪, ৫ মাস এভাবেই ফেলে রাখা কোন নিয়মের মধ্যে পড়ে- তা জানতে চান তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমার বাবা ব্রেন স্ট্রোক করার পর কোনো অ্যাম্বুলেন্স পাইনি। মোটরসাইকেলে দুজনের মাঝে বসিয়ে তাকে হাসপাতালে নিয়েছিলাম, কিন্তু বাঁচাতে পারিনি। মুক্তাদির মুন বলেন, আমার বাবা অসুস্থ হবার পর আমরা দুই ভাই কোলে করে কিছু রাস্তা রিকশা করে কসাই বাড়ি রেললাইন পার হই। এরপর উত্তরায় বাংলাদেশ মেডিকেলে নেওয়ার পথে বাবা মারা যান।
দক্ষিণ ও উত্তরখানের জনগণ পক্ষে থেকে মানববন্ধনে আসা ব্যক্তিরা ৭টি দাবি তুলে ধরেন। কাজের গতি যে কোনো উপায়ে দ্রুত বৃদ্ধি করা। জরুরি চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় রাস্তাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে লোকবল বৃদ্ধি করে চলাচল উপযোগী করা। যেসব রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে সেগুলোর একটি টাইম সিডিউল দিয়ে দিতে হবে, কত দিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে এটা জানিয়ে প্রত্যেক রাস্তায় তা লিখে টানিয়ে দিতে হবে। যে রাস্তার কাজ যে ঠিকাদার পেয়েছে সে ঠিকাদারের প্রতিষ্ঠানের নাম এবং ঠিকানা, যোগাযোগের নাম্বার জানিয়ে দিতে হবে। রাস্তার কাজের মান নিয়ে সাধারণ জনগণের মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে- এই বিষয়ে সঠিক তদারকি করতে হবে। নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে কাজ চলতে দেখা যাচ্ছে, রাস্তার কাজ ভালো মানের উপকরণ দিয়ে করার আদেশ জারি করতে হবে। কোনো ঠিকাদার যথাযথভাবে কাজ না করলে কিংবা অনুপস্থিত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
মন্তব্য করুন