দলীয় পদ পেতে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নির্যাতনের মাধ্যমে সন্তান নষ্ট করার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের রামপুরা থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ ফরিদের বিরুদ্ধে।
গত ২১ জুলাই রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পরদিন ভুক্তভোগী খিলগাঁও থানায় নারী নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার মামলা করলে ২৩ জুলাই খালিদ সাইফুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
তবে আশ্চর্যজনকভাবে এমন মামলায়ও আটকের পরদিনই জামিনে মুক্তি পান অভিযুক্ত খালিদ সাইফুল্লাহ।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী রাজধানীর ফরাজী হাসপাতালের পুষ্টিবিদ ডাক্তার রুবাইয়া রীতির অভিযোগ আসামি খালিদ সাইফুল্লাহ ছাত্রলীগ করে বলেই তিনি (ভুক্তভোগী) ন্যায় বিচার পাননি।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের মার্চ মাসের ১৩ তারিখে রুবাইয়া রীতিকে বিয়ে করেন খালিদ সাইফুল্লাহ। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য রীতিকে নির্যাতন শুরু করেন সাইফুল্লাহ। এর মধ্যেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন রীতি। এ নিয়ে শুরু হয় সাংসারিক ঝামেলা।
রীতি বলেন, আমরা নিজেরা বিয়ে করি। সে যেহেতু নতুন কমিটিতে আবারও সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী, এ কারণে বিয়ে করার সময় আমাকে বিষয়টি গোপন রাখতে বলে খালিদ।
রীতি বলেন, বিয়ের দেড় মাস পর আমি কনসিভ করি। কিন্তু ও আমাকে বলল এই বাচ্চা আমি রাখতে পারব না। এই বাচ্চার কি পরিচয় দেব? আমি বললাম কেন আমরা কি অবৈধভাবে বিয়ে করেছি, বাচ্চার পরিচয় দিতে সমস্যা কী?
‘তখন খালিদ আমাকে বলে, বাচ্চার পরিচয় দিতে গেলে আমার কমিটি থাকবে না। তুমি জানো না, লাখ লাখ টাকা খরচ করে আমি এই কমিটি পেয়েছি। তোমার জন্য, এই বাচ্চার জন্য আমি কমিটি ছাড়তে পারব না। বাচ্চা নষ্ট করে ফেল। এর পর থেকে আমাকে বিভিন্নভাবে খুব জোর করতো আমি যেন হাসপাতালে গিয়ে গর্ভপাত করে ফেলি’, বলেন তিনি।
এরইমধ্যে ছাত্রলীগ নেতা খালিদ যৌতুকের দাবি করে জানিয়ে ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘আশুলিয়াতে ৫ কোটি টাকার একটি জমি কিনতে বায়না করার জন্য আমার কাছে এক কোটি টাকা দাবি করে সে। কিন্তু আমি টাকা দিতে অস্বীকার করি। টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ও আমাকে ধাক্কা এবং পেটে লাথিও মারে। অবশ্য সাথে সাথে আমার কাছে ক্ষমাও চায়। আমি এটাকে স্বাভাবিক ধরে নিয়ে কিছু বলিনি। কিন্তু কিছুক্ষণ পর থেকেই পেটে ব্যাথা শুরু হয়। ওই দিন রাতে একটু একটু ব্লিডিংও হয়। এভাবে আস্তে আস্তে ব্লিডিং হতে হতে শনিবার বাচ্চাটা মারা গেল।’
গ্রেপ্তারের পর দিনই জামিন পাওয়া প্রসঙ্গে রীতি বলেন, ‘আমার সাথে করা অন্যায়ের সুষ্ঠু বিচার হলো না। আমি সুষ্ঠু বিচার পাইনি। শুধুমাত্র ছাত্রলীগ করে বলে আসামি খালিদ সাইফুল্লাহ ফরিদের জামিন হয়ে গেল।’
বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জানিয়ে রুবাইয়া আরও বলেন, ‘আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমার মনে হয় ও যে কোনো সময় আমাকে মেরে ফেলতে পারে।’
এদিকে এ ঘটনাটিকে ষড়যন্ত্র বলে গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন খালিদ সাইফুল্লাহ । তিনি বলেন, ‘আসলে আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।’
রুবাইয়াকে বিয়ে করেছিলেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘আমি এসব নিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ হয়ে গেছি। আমি এটা নিয়ে বসে কথা বলব।’
তিনি বলেন, ‘আমার মান-সম্মান নষ্ট করা হয়েছে। এটা নিয়ে একটা রাজনৈতিক গেম হয়েছে। এটা নিয়ে আমি আদালতের শরণাপন্ন হব।’
অন্যদিকে, বিবাহিত কেউ ছাত্রলীগের কেউ ছাত্রলীগে জায়গা পান না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পী। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ নামধারী কেউ যদি এটা করে থাকে তবে আমি বলব সে অবশ্যই অন্যায় করেছে। এমন যদি কেউ করে তবে সে অবশ্যই ছাত্রলীগ করার যোগ্যতা হারিয়েছে এবং সে ছাত্রলীগের নেতৃত্বের কোনো পর্যায়ে আসার যোগ্যতা রাখে না।
রাজিবুল ইসলাম বাপ্পী জানান, প্রকৃতপক্ষে রামপুরা ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। সেখানে দুটো কমিটি চারজন প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি পরিচয় দিতো। আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো কমিটিতেই দুজন প্রেসিডেন্ট বা দুজন সেক্রেটারি নেই। তাই রামপুরা থানার কমিটি নিয়ে আগে থেকেই বিতর্ক ছিল। রামপুরা দীর্ঘদিন ঢাকা দক্ষিণের আওতায় ছিল। কিন্তু গত ২০ ডিসেম্বর থেকে রামপুরা সাংগঠনিকভাবে ঢাকা উত্তরের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওই ২০ ডিসেম্বরের পরেই মহানগর উত্তরের কমিটি রামপুরা থানার কমিটিকে বিলুপ্ত করে।
বাপ্পী আরও বলেন, ‘উত্তরের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি যারা আছেন তারা দক্ষ সংগঠক। আমি বিশ্বাস করি তারা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।’
মন্তব্য করুন