জলবায়ু সুরক্ষায় অর্থ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে পাঁচ শতাধিক তরুণ জলবায়ু কর্মী। লোকসান ও ক্ষয়ক্ষতির তহবিলে ঘাটতি পূরণে এ দাবি করা হয়েছে। টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে জলবায়ুর জন্য ক্ষতিকর এবং ব্যয়বহুল জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ করারও দাবি তোলা হয়।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে একশনএইড বাংলাদেশ-এর যুব প্ল্যাটফর্ম এক্টিভিস্টা বাংলাদেশের সহযোগিতায় আয়োজিত ক্লাইমেট স্ট্রাইক থেকে বিশ্ব নেতাদের কাছে এই দাবি জানান জলবায়ু কর্মীরা।
জলবায়ু সুরক্ষা ও জলবায়ুতে অর্থায়নের নিশ্চিতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ, নবায়নযোগ্য শক্তির সম্প্রসারণ ও টেকসই কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানাতে বিশ্বে চলমান গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকের অংশ হিসেবে জলবায়ু ধর্মঘটে নামেন তরুণ জলবায়ু আন্দোলনকারীরা। সমাবেশ শেষে একটি শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। শিক্ষা ভবন প্রদক্ষিণ শেষে, শহীদ মিনারে সমবেত হন পাঁচ শতাধিক জলবায়ু কর্মী। সেখানে জলবায়ু সুবিচারের দাবি জানিয়ে আন্দোলন কার্যক্রমের সমাপ্তি টানেন তারা।
সমাবেশে আন্দোলনকারীরা জানান, উন্নত দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়নের মাধ্যমে জলবায়ু সংকট সৃষ্টি করছে। তারা নব্য ঔপনিবেশিক শোষণ, যুদ্ধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে এই পৃথিবীকে ধ্বংস করছে। বছরে ৬৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিকে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। আর এই ভর্তুকি গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণকে উৎসাহিত করছে। উন্নত দেশগুলো এই ভর্তুকি দানে উৎসাহ দিচ্ছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসে ভূমিকা রাখছে এমন অনেক ব্যবসা সরকারি পর্যায়ে ভর্তুকি পায়। এ বাবদ প্রতি বছর খরচ হচ্ছে প্রায় ২ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলার, যা বৈশ্বিক জিডিপির আড়াই শতাংশ। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে দক্ষিণের দেশগুলোর তরুণ, কৃষক, নারী এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়গুলোতে। এটি অনুন্নত দেশগুলোর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের কাছে তাদের পরিবেশগত ঋণ বহুগুণ বাড়িয়ে তুলছে। এই অবস্থায় জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে টেকসই প্রকল্প এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
জলবায়ু সংকট নিরসন, এই বিষয়ে ন্যায়বিচার দাবি ও জনগণকে সচেতন করতে একশনএইড বাংলাদেশ ও এক্টিভিস্টা বাংলাদেশসহ ১৫ টি সংগঠনের পাঁচ শতাধিক তরুণ জলবায়ু কর্মী এই স্ট্রাইকে অংশ নেন। একই সময় সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কুড়িগ্রাম, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, জামালপুর, সুনামগঞ্জ, গাজীপুর, চাঁদপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, নেত্রকোণা, কক্সবাজার, টেকনাফ এবং বরগুনাসহ ১৯ টি জেলার এবং ৭ টি লোকাল ইয়ুথ হাবের তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরাও গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকে সংহতি প্রকাশ করেন।
শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে তরুণ জলবায়ু কর্মীরা স্লোগান, প্ল্যাকার্ড, চিত্রকর্ম, গান, নাটক এবং পোস্টার প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে জলবায়ু সুবিচারের ও জলবায়ুতে অর্থায়নের দাবি জানান। এ সময় এখনই জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে এই মর্মে ‘ফিক্স দ্য ফাইন্যান্স’, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করো’, ‘ক্ষতিকারক কৃষি চর্চায় বিনিয়োগ বন্ধ করো’, ‘ক্লাইমেট জাস্টিস নাউ’ ‘ ফান্ড আওয়ার ফিউচার’ ‘পে আপ ফর লস অ্যান্ড ড্যামেজ , পে আপ ফর ক্লাইমেট ফাইনান্স, ‘জলবায়ু সহনশীল টেকসই কৃষি চর্চায় বিনিয়োগ করুন’সহ ইত্যাদি লেখা ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান নেন স্ট্রাইকে যোগ দেওয়া জলবায়ু আন্দোলনকারীরা।
তরুণ জলবায়ু কর্মী শিমু শেখ বলেন, “আমরা ফসিল ফাইন্যান্সের অবসান ঘটাতে লড়াই করছি। এর ক্ষতি ও ক্ষয়ক্ষতির অর্থায়নে আরও বেশি মনোযোগ দিচ্ছি। ধনী দেশ ও কর্পোরেশনের মুনাফা ক্ষুধার্ত মানসিকতায় আমরা আহত হচ্ছি। আমাদের ভবিষ্যৎ কিছু লোভী কার্টেলের জন্য লাভের জন্য বলি দেওয়া যাবে না। ”
তরুণ জলবায়ু কর্মীদের এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে একশনএইড বাংলাদেশ এর ইয়াং পিপল টিম লিড মো. নাজমুল আহসান বলেন, আমরা জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগের জন্য তরুণদের কণ্ঠস্বরের সাথে আমাদের সংহতি প্রকাশ করছি। আমাদের এবং তরুণ প্রজন্মের জন্য এখনই সবুজ উত্তরণের পথে থাকা উচিত। আমরা বাংলাদেশ এবং সারা বিশ্বে সবচেয়ে জলবায়ু-চাপগ্রস্ত মানুষের দুর্বলতা এবং ক্ষতি এবং ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় বিনিয়োগের দাবি জানাই।
মন্তব্য করুন