বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদ ও মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ছবি দিয়ে কিছু পোস্টার ও ব্যানার টানানো হয়েছিল রাজধানীর হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাস চত্বরে। কিন্তু সেই পোস্টার ও ব্যানারটি কে বা কারা ছিঁড়ে ও পুড়িয়ে ফেলেছে। এ নিয়ে আন্দোলনকে সমর্থন করা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার (০৪ সেপ্টেম্বর) মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটেছে। এর আগে মঙ্গলবার (০৩ সেপ্টেম্বর) পোস্টার ও ব্যানারগুলো টানানো হয়েছিল।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আওয়ামীপন্থি ১০ জন শিক্ষক আন্দোলনে যেতে শিক্ষার্থীদের বাধা দেন। এছাড়া আহত হয়ে যেসব আন্দোলনকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন, তাদের ‘সন্ত্রাসী’ তকমা দিয়ে চিকিৎসা প্রদানে বাধা দিয়েছিলেন ওই ১০ জন শিক্ষক। পরে সদ্য সাবেক অধ্যক্ষ ডা. মো. দৌলতুজ্জামান চিকিৎসকদের ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করেন যেন, রাজধানীর হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আন্দোলনে আহত কাউকে চিকিৎসা দেওয়া না হয়। যা চিকিৎসক ও মেডিকেল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করে। কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসনিক হয়রানির ভয়ে তখন বিষয়টি নিয়ে কেউ মুখ খোলেননি।
পরে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে অভিযুক্ত ১০ শিক্ষককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ক্যাম্পাসে কয়েকটি ব্যানার টানিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই ব্যানারে রংপুরে শহীদ আবু সাঈদ ও ঢাকার উত্তরায় মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ছবি ছিল। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আখ্যা দিয়ে মেডিকেল কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষক যে মানববন্ধন করেছিলেন, সেই মাননবন্ধনের ছবিও জুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এক দিনের মধ্যেই প্রকাশ্য দিবালোকে সেই ব্যানার পুড়িয়ে দেয় মেডিকেল কলেজেরই কয়েকজন ছাত্রলীগকর্মী।
এ বিষয়ে মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, আন্দোলনে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি যারা আন্দোলনের বিরোধীতা করেছিল, তাদের প্রকৃত চরিত্র উন্মোচন করতেই কিছু পোস্টার ও ব্যানার টানানো হয়েছিল। কিন্তু প্রকাশ্য দিবালোকে সেই পোস্টারগুলো ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ব্যানার। যারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেতে বাধা দিয়েছিল, যারা আহত শিক্ষার্থীদের এই মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা করতে দেয়নি, এর পেছনে যে তারা আছে, সেটি অত্যন্ত স্পষ্ট।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেডিকেল কলেজের এক অধ্যাপক কালবেলাকে বলেন, পোস্টার ছিঁড়ে ও ব্যানার পুড়িয়ে মানুষের মুক্তির জন্য ছাত্র-জনতার যে আত্মত্যাগ সেটিকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। যারা গত ১৫ বছর ধরে মেডিকেল কলেজটিতে স্বেচ্ছাচারিতার আঁতুরঘর বানিয়ে রেখেছিলেন তারাই এ কাজটি করেছেন। তারা আমারই ছাত্র বা সহকর্মী। তাদের এ ধরনের কাজে খুব ব্যথিত হয়েছি, এটি ছাত্র-জনতার কাছে আমাদের ও আমাদের প্রতিষ্ঠানের সম্মানও নষ্ট করেছে।
এদিকে বিষয়টি স্বীকার করেছেন প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম মুজিবুল হক। কালবেলাকে তিনি বলেন, যেসব শিক্ষকরা তথাকথিত শান্তি মিছিলে (ছাত্র আন্দোলন বিরোধী মিছিল) অংশ নিয়েছিল, তাদের নাম দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা ব্যানার ও কিছু পোস্টার লাগিয়েছিল। ওই ব্যানার ও পোস্টারে আবু সাঈদ ও মুগ্ধের ছবিও ছিল।
তিনি আরও বলেন, আমরা ভিডিও ফুটেজে দেখেছি একটা ছেলে ও একটা মেয়ে পোস্টারগুলো ছিঁড়েছে। তবে যে ব্যানার পোড়ানো হয়েছে, সেখানে সিসিটিভি নেই। ফলে এটা দেখা সম্ভব হয়নি যে সেটি কারা পুড়িয়েছে। এটা নিয়ে আমরা আরও পর্যালোচনা করব। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে একটা কমিটি করে দিয়েছি।
‘এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, যেখানে আবু সাঈদ ও মুগ্ধের মতো বীরের ছবি আছে, সেটা পোড়ানো হয়েছে। এটা কোনোভাবেই সমর্থন যোগ্য না,’ বলেন অধ্যক্ষ মুজিবুল হক।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গঠিত মেডিকেল সম্বয়ক মো. তারেক রেজা কালবেলাকে বলেন, এ ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এর পেছনে হীন স্বার্থ ও উদ্দেশ্য আছে। বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, এটা আওয়ামীপন্থি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) বা তাদের অনুসারীদেরই কাজ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেও তাদের প্রচুর লোক আছে, যারা এখনও স্বপদে বহাল। আমরা ইতোমধ্যে এদের শনাক্ত করার কাজ করছি।
তিনি বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যেন যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন