সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানের চেতনা আগলে রাখবে দেশের শ্রমিকশ্রেণি। যারা ভেবেছিল হেলমেট বাহিনী ও রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে হত্যা-জুলুম করে চিরদিন ক্ষমতায় থাকবে, আজ প্রমাণিত হয়েছে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার শক্তির সামনে তাদের টেকার সামর্থ্য নাই।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নির্মিত মঞ্চে শ্রমিক জনসভায় ‘শ্রমিক-ছাত্র-জনতার বিজয় সংহত ও শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা কর’ ব্যানারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ বক্তব্য দেন।
তিনি আরও বলেন, কাপুরুষের মতো তারা দেশ ছেড়েছে। শহীদের আত্মত্যাগ ও জনতার বুকের রক্ত দিয়ে অর্জিত গণঅভ্যুত্থান গণতন্ত্রের পথে দেশকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে।
তিনি অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, স্বৈরাচারকে উচ্ছেদ করেছি। শ্রমিক-মেহনতি মানুষের ওপর শোষণকেও উচ্ছেদ করতে হবে। প্রথম পর্বের সংগ্রামের বিজয়কে রক্ষা করে দ্বিতীয় পর্বের সংগ্রাম হবে শোষণমুক্তির। তিনি সমবেত শ্রমিক-জনতার উদ্দেশ্যে ‘কেউ খাবে আর কেউ খাবে না’ এই নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই গড়ে তুলে শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জননেতা সেলিম আরও বলেন, যাদের শ্রমে-ঘামে দেশের অর্থনীতি সচল থাকে তাদের জীবনের প্রতিটি দুঃখ মোচন করা এই সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার হতে হবে। আমরা সতর্কতার সঙ্গে এ বিষয়ে সরকারের ভূমিকা ও উদ্যোগ পর্যবেক্ষণ করব।
শ্রমিক জনসভা থেকে জুলাই গণহত্যায় অন্তত ৯২ শ্রমিকসহ সব ছাত্র-জনতা হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করা হয়। পাটকল-চিনিকলসহ সব বন্ধ কলকারখানা চালু, চাকুরিচ্যুত সব শ্রমিকের পুনর্বহাল, সর্বজনীন রেশনিং ব্যবস্থা ও শ্রমিকের জন্য আবাসন প্রকল্প গ্রহণ, সব প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিং বন্ধের দাবি জানানো হয়।
বক্তারা বলেন, জনতার বিজয় সংহত করে শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ও অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বক্তারা গণতান্ত্রিক শ্রম আইন ও বিধিমালার জন্য দীর্ঘদিনের সংগ্রাম অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেন।
তারা বলেন, গার্মেন্ট শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকার দাবিতে গত নভেম্বর মাসে গুলি চালিয়ে ৪ শ্রমিক হত্যার ঘটনার বিচার করতে হবে। একইসঙ্গে মজুরি পর্যালোচনা করে বাঁচার মজুরি ঘোষণা করতে হবে।
জনসভা থেকে বিআরটিএ কর্তৃক ব্যাটারিচালিত রিকশার নিরাপদ মডেল প্রণয়ন করে লাইসেন্স প্রদানের দাবি জানানো হয়। চা-শ্রমিকদের দৈনিক ন্যূনতম মজুরি ৫০০ টাকা ঘোষণা ও ভূমি মালিকানা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। বক্তারা পুনর্বাসন হকার উচ্ছেদ বন্ধ ও চলমান দখল-পাল্টাদখল-চাঁদাবাজি অবসানের দাবি জানান।
সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাসহ দেশের সব প্রতিষ্ঠানে হরিজনদের বংশানুক্রমিক নিয়োগ ব্যবস্থা এবং হরিজনসহ দলিত শ্রমজীবী মানুষের শিক্ষা-চিকিৎসার অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
শ্রমিক জনসভা শেষে একটি বিশাল মিছিল কদমফুল ফোয়ারা, তোপখানা সড়ক, পল্টন মোড় হয়ে গুলিস্তান এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি শ্রমিকনেতা মন্টু ঘোষের সভাপতিত্বে ও রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম নাদিমের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত শ্রমিক জনসভায় আরও বক্তব্য দেন- শ্রমিকনেতা আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের উপদেষ্টা রাগীব আহসান মুন্না, গার্মেন্ট টিইউসির সহ-সভাপতি জলি তালুকদার, ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সহ-সভাপতি আক্তার হোসেন, বিপ্লবী সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের দপ্তর হযরত আলী, রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুছ, চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির সমন্বয়ক এসএম শুভ, বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক জসিমউদ্দিন, হরিজন সেবক সমিতির উপদেষ্টা গগণ লাল সামুন্দ প্রমুখ।