বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ ও ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি আজ। সোমবার (৫ আগস্ট) এই কর্মসূচি ঘিরে ঢাকায় ব্যাপক জনসমাগম ঘটাতে চায় আন্দোলনকারীরা। তারা সরকারের জারি করা কারফিউ উপেক্ষা করার ঘোষণা দিয়েছেন আগেই। এজন্য ঢাকার সবগুলো প্রবেশপথ এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ঢাকার প্রবেশপথ গাবতলী আমিনবাজার সেতু।
কোটা আন্দোলনের কারণে দেওয়া অনির্দিষ্টকালের কারফিউতে সোমবার (৫ আগস্ট) সকালে রাজধানীর মিরপুর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলী, যাত্রাবাড়ী ও আমিনবাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তা একেবারে ফাঁকা। সাধারণ মানুষের চলাচল খুবই কম। তবে মাঝেমধ্যে কিছু মোটরসাইকেল, রিকশা এবং ব্যাটারি চালিত রিকশা দেখা গেছে। গাবতলীর সেই চিরচেনা রূপ আজ দেখা যায়নি। বাস কাউন্টারগুলোর বন্ধ। শুনসান নীরবতা বিরাজ করছে এই এলাকায়।
এদিকে আজ সকাল থেকে মিরপুরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যানবাহনের চলাচল নেই বললেই চলে। মিরপুর ১০ নম্বর ঘিরে রেখেছে সেনাবাহিনী। কোন গাড়ি চলতে দেওয়া হচ্ছে না। জরুরি সেবা প্রদান করা গাড়ি ছাড়া অন্য গাড়িকে ১০ নম্বর গোল চত্তর প্রবেশ না করিয়ে বিকল্প পথে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
মিরপুরের বিভিন্ন রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায় রোববারের (৪ আগস্ট) আন্দোলনে ব্যবহৃত ইটের টুকরো। মিরপুর ১ ও ২ নম্বর মাজার রোডে কিছু ব্যাটারি চালিত রিকশা চলাচল করতে দেখা যায়।
বিভিন্ন মোড়ে সেনাবাহিনীর টহল এবং পুলিশের শক্ত অবস্থান দেখা গেছে। তবে সকাল ৯টা পর্যন্ত এসব এলাকায় আন্দোলনরত কোন শিক্ষার্থীকে দেখা যায়নি।
গাবতলীতে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমিনবাজার ব্রিজ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। যাতে কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে না পারে।
উল্লেখ্য সরকারি চাকরিতে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ জুলাই রাতে সারা দেশে কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
এর পরে ২১ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত নির্বাহী আদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। সেই সপ্তাহের শেষ দুদিন অবশ্য বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সীমিতভাবে সরকারি-বেসরকারি অফিস চলে।
পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হলে গত সপ্তাহের শুরুর ৩ দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি অফিস খোলা রাখা হয়। এরপর বুধবার (৩১ জুলাই) থেকে স্বাভাবিক সময় ধরে চলছে সব সরকারি-বেসরকারি অফিস।
তবে শনিবার (৩ আগস্ট) থেকে পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হতে থাকে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সরকার পদত্যাগের একদফা দাবি ঘোষণা করেন।
অসহযোগ আন্দোলনের এই কর্মসূচিকে ঘিরে রোববার (৪ আগস্ট) ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত বহু হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।
দেশজুড়েই সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনায় রোববার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ করা হয়। এই সিদ্ধান্ত ঢাকাসহ সব বিভাগীয় সদর, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, শিল্পাঞ্চল, জেলা ও উপজেলা সদরের জন্য কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মন্তব্য করুন