সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে পুঁজি করে সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সারা দেশে চিরুনি অভিযান অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ছবি, ভিডিও ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তির ভিত্তিতে হামলায় সরাসরি জড়িদের অবস্থান শনাক্ত করে তাদের গ্রেপ্তার অভিযান চলছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত ১২ দিনে সহিংসতায় জড়িত, পরিকল্পনাকারী, উসকানিদাতা ও অর্থদাতাদের রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ১৩৩টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় মঙ্গলবার (২৩ জুলাই)) পর্যন্ত এক হাজার ৩০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের তালিকায় বিএনপি, জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দেলের পদধারী নেতা রয়েছেন। গত ১২ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত এসব মামলা হয়। মামলায় নাশকতাকারীদের অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন নাম-পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ড. খ. মহিদ উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে পুঁজি করে রাজধানীসহ দেশজুড়ে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে একটি মহল। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও সহিংসতার ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। নাশকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকেই আইনের আওতায় আনা হবে।
ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ জানান, কোটা আন্দোলনকে ঘিরে যারা নাশকতার নির্দেশ দিয়েছে এবং মাঠে তাণ্ডব চালিয়েছে, তাদের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ডিবি দেড় শতাধিক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ অনেকেই আছেন। তিনি জানান, গতকাল অভিযান চালিয়ে বিএনপি নেতা সাইফুল আলম নিরব, রাশিদুজ্জামান মিল্লাত, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস এবং তরিকুল আলম তেনজিংকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও অনেকের বিরুদ্ধে তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের সবাইকেই আইনের আওতায় আনা হবে।
গত শনিবার থেকে কারফিউ চালুর পর দেশজুড়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যারা নাশকতার সঙ্গে যুক্ত, তাদের গ্রেপ্তারে চিরুনি অভিযান শুরু করে পুলিশ। ছবি, ভিডিও ফুটেজ এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নাশকতাকারীদের শনাক্ত করে তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো শুরু হয়। গ্রেপ্তারের এই অভিযান চলমান রয়েছে বলেও জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা।
এর আগে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলে প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে নাশকতা চালানো হয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়। এরপর আন্দোলনকারীরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিশৃঙ্খলভাবে ভাঙচুর এবং হামলা চালায়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কিছু দুর্বৃত্ত রাজধানীজুড়ে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব শিক্ষার্থী কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তারা ভয়াবহ নাশকতায় জড়িত নন বলে পুলিশ মনে করছে। একজন সাধারণ শিক্ষার্থীও যাতে পুলিশের হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে পুলিশের মাঠ পর্যায় পর্যন্ত বার্তা দেওয়া হয়েছে। যারা নাশকতায় জড়িত ছিল, শতভাগ তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তাদের আইনের আওতায় নেওয়া হবে।
এদিকে ঢাকার বাইরে কালবেলার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী, ময়মনসিংহের চার জেলায় গতকাল পর্যন্ত ৩৩ মামলায় ১৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামে বিএনপি ও জামায়াতের ৬২৭ জন, রংপুরে ৭৪ জন, মেহেরপুরে ১২ জন, নোয়াখালীতে ১২ জন এবং কুমিল্লায় ১১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পাঁচ দিনে কারাগারে ১২৫৮ আসামি: সহিংসতার ঘটনায় গত পাঁচ দিনে রাজধানীর বিভিন্ন থানার দায়ের হওয়া বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার ১ হাজার ২৫৮ আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে সোমবার (২২ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুর রায় চৌধুরীসহ আরও ৪৭৪ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। এর আগে গত ২২ জুলাই ৩৯৪ জন, ২১ জুলাই ১৮৮ জন, ২০ জুলাই ১৪২ জন ও ১৯ জুলাই ৬০ জন আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
নাশকতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ নানা অভিযোগ ঢাকা মহানগরের ৩৭টি থানার মামলায় গ্রেপ্তার ৪৭৪ আসামিকে আদালত হাজির করা হয় গতকাল। তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা। শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কারাগাারে যাওয়া আসামিদের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা রয়েছেন। এদিকে শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় ছয়জন, শাহবাগ থানার পাঁচজন, ধানমন্ডি থানার চারজন, মিরপুর মডেল থানার একজন এবং চকবাজার থানার একজনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
মন্তব্য করুন