রাজধানীর বংশালের মিরনজিল্লা হরিজন কলোনিতে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কাউন্সিলর আউয়াল হোসেনের নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মীর হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় মিরনজিল্লা হরিজন কলোনির অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।
হামলাকারীরা ধারাল দা, চাপাটি ও লাঠি নিয়ে হামলা চালায়। হামলাকারীরা হরিজন পল্লীর ঘর-বাড়ি ,মন্দির, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হামলা করে ভাঙচুর করে। এ সময় হরিজন কলোনির অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়। এদের মধ্যে ৭ জন গুরতর আহত হয়ে। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মিডফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি।
বুধবার (১০ জুলাই) সকালে মেয়রের কথার ব্যক্তব্যের প্রতিবাদ ও তাদের চারশত বছর ধরে বসবাস করা কলোনি রক্ষার দাবিতে সংবাদ সম্মেলনের পরবর্তী মুহুর্তে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা কালবেলাকে বলেন, আগে মেয়র অনেকগুলো মিথ্যা কথা বলেছেন।আমাদের এখানে নাকি মাদক ব্যবসা হয় কিশোর গ্যাং তৈরি হয় এমন মন্তব্য করেন তিনি। সম্প্রতি চারশ পরিবারের ৬০ পরিবারকে একটি ভবনে পুনঃবাসন বা আশ্রয়ণের ব্যবস্থা করেন। এই ৬০ পরিবারের সদস্যরা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অফিসে চাকরি করেন। গতকাল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তাদের ঘর বুঝিয়ে দিতে আসলে তারা ঘর নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ সময় কাউন্সিলর ও তার লোকজন হরিজনদের ওপর হামলা করে।
হরিজনদের পক্ষে রিটকারী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আইনুন্নাহার সিদ্দিকা লিপি বলে, আমরা মিরনজিল্লা পল্লীর হরিজন সম্প্রদায়ের ভূমি রক্ষা কমিটির আয়োজনে সংবাদ সম্মেলন করছিলাম। সংবাদ সম্মেলন শেষে ম্যাজিস্ট্রেট০ ও কাউন্সিলর আউয়াল হোসেন হরিজন পল্লীতে আসেন। এ সময় মিরনজিল্লা পল্লীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় কাউন্সিলর ও ম্যাজিষ্ট্রেটের তখন কাউন্সিলরে লোকজন পল্লীর ভিতরে হামলা চালিয়ে হরিজনদের আবাসিক ঘর-বাড়ি ও মন্দির ভাঙচুর করে।
এ সময় কাউন্সিলরের সমর্থকরা প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষের ওপর হামলা চালিয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন সুবল লাল ( ৩৬), রুমন দাস (৩৫), উদয় (২০), ঋষি কুমার (১৯), বিরুল দাস (২৪), বিমল দাস (৪০), করুন দাস (৩৫), শিবলাল (৪০), প্রশান্ত (১৩), নিরঞ্জন দাস (৭৫), নিলয় দাস (১৮) ও দীপ্ত দাস (১০ )।
এ সময় পাল্টা হামলায় আহত হন কাউন্সিলরের সমর্থক ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মকবুল হোসেন (৫০), আওয়ামী লীগ কর্মী মো. নাঈম (৪০), মো. রুবেল (৩৮) ও রুবেল গাজীসহ (৩৫) কয়েকজন।
হামলার শিকার মিরনজিল্লা হরিজন পল্লীর বাসিন্দা টিটু সরকার টিটু বলেল ,আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই সংবাদ সম্মেলন শেষ করেছি। তারপর কাউন্সিলর ও ম্যাজিষ্ট্রেট আসে সঙ্গে পুলিশ ও কয়েকশ লোক নিয়ে। এ সময় কাউন্সিলরের সমর্থকরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। হকি, রামদা , চাপাতি, রড নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায় বৃষ্টির মতো ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে তারা। আমাদের অনেকে গুরুতর আহত হয়েছে। আমাদের মন্দির ভেঙেছে। আমরা আমাদের মাটিতে থাকতে চাই।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করর্পোরেশনের ৩৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরে বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজি ,কিশোর গ্যাং পরিচালনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব বিষয়ে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আউয়াল হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া জানান, বিকেল পর্যন্ত অন্তত ১৬ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। সবার অবস্থাই আশঙ্কামুক্ত।
বংশালের আগা সাদেক লেনের মিরনজিল্লা হরিজন সিটি কলোনি উচ্ছেদের জন্য সম্প্রতি নোটিশ দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়।
জানা গেছে, ওই রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্ছেদ অভিযানের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আপিল বিভাগ।
মন্তব্য করুন