ফুটপাতই তাদের সব। আছে ছেঁড়া পলিথিন জোড়া দিয়ে জিনিসপত্র রাখার জায়গা। তারও দিতে হয় ভাড়া। নেই উন্নত মানের কোন যন্ত্রপাতি। আছে শুধু হাতের নৈপুণ্য। যা দিয়েই বানান যে কোনো গাড়ির চকচকে বডি।
যে কাজ করতে প্রয়োজন দক্ষ কারিগর আর উন্নত মানের সব যন্ত্রপাতি, সেখানে নামমাত্র কিছু সরঞ্জাম দিয়ে মেরামত করছেন গাড়ি। স্বামী-স্ত্রীর হাতের নৈপুণ্যে ভেঙ্গে যাওয়া গাড়ি নেয় নতুন রূপ। এভাবেই প্রতি মাসে এ দম্পতি আয় করছেন লাখ টাকা।
কি কি কাজ করতে পারেন সে বিষয়ে পারভেজ মিয়া কালবেলাকে বলেন, বিভিন্ন অংশের রিপেয়ারিং সহ ফ্রিজ, বাচ্চাদের খেলনা ভেঙে গেলে তা প্রায় নতুনের মত করে ঠিক করে দিতে পারি। একসময় বাবা এ কাজ করতো। তার কাছ থেকে কাজ শিখে এখন আমিই করছি। স্ত্রীকেও কাজ শিখিয়েছি, সেও আমাকে সহযোগিতা করে।
‘বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর। অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই কবিতাংশের অন্যতম উদাহরণ যেন পারভেজ-পারভিন দম্পতি। অভাবের সংসার আর স্বামীর অক্লান্ত পরিশ্রম তাকে ভুলিয়ে দিয়েছে ‘মানুষ কি বলবে’, এমন পিছুটান।
স্ত্রীর আগ্রহ দেখে কাজও শিখিয়েছেন পারভেজ মিয়া। বাসার কাজ শেষ করে এখন স্বামীর পাশে সময় দেন পারভিন বেগম। ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছেন সূক্ষ্ম হাতের ছোঁয়ায়। মেরামত করছেন বিলাসবহুল গাড়ির ভেঙে যাওয়া লাইট ও প্লাস্টিক বডি।
পারভিন বেগম বলেন, গাড়ির বেশকিছু অংশসহ মোটরসাইকেলের বডির বিভিন্ন অংশ রিপেয়ারিং করতে পারি। ঘরের কাজ সামলে সকালে আসি এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করি।
রাজধানীর মতিঝিলের দেওয়ানবাগ শরীফের ঠিক সামনের রাস্তায় বসে এক মনে কাজ করে যাচ্ছেন এ দম্পতি। কখনো জোড়া দিচ্ছেন প্লাস্টিকের টুকরো, আবার কখনো ঠিক করছেন ভেঙে যাওয়া গাড়ির লাইট। কাজ ভালো হওয়ায় তাদের দোকানে ভিড় লেগে থাকে প্রতিনিয়ত।
পারভেজের বাবাও ছিলেন একজন প্লাস্টিক মেরামতের কারিগর। বাবার সঙ্গে দোকানে বসে কাজ শিখেছেন তিনি। পরবর্তীতে বাবার মৃত্যুর পর এটাকেই পেশা হিসেবে বেঁছে নেন তিনি।
প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ফুটপাতে বসেই করেন গাড়ি মেরামতের কাজ। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকেই গাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত মালামাল নিয়ে ছুটে আসেন পারভেজের কাছে। পারভেজ-পারভিনের নিপুণ হাতে তা হয়ে ওঠে নতুনের মতোই চকচকে।
মন্তব্য করুন