বিএনপিকে বলে দেওয়া হয়েছে, আন্দোলনের নামে জানমাল-সম্পত্তি ধ্বংস অথবা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকারের কোনো বাধা থাকবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) ইইউ’র বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোরের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা জানান।
এর আগে, ঢাকা সফররত ইইউ’র মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোরের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যা, মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা করেন।
আগামী ২৭ জুলাই কর্মসূচি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসা গেল কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত কী হবে? দেখুন, হঠাৎ করেই তারা (বিএনপি) এমন সব কর্মসূচি দিচ্ছে যেগুলোয় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। তারা বলছে, আন্দোলন শুরু করেছে, আন্দোলন করবে। আমরা সেখানে কোনো বাধা দিচ্ছি না।
তিনি বলেন, যদি জনগণ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে আসে তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই কিন্তু জনগণকে জোর করে আনলে আমাদের আপত্তি। আমাদের আপত্তি সেখানেই যদি জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে, রাস্তাঘাট বন্ধ করে তারা যদি কিছু করে কিংবা জানমালের ক্ষতি করে অথবা জীবননাশ হয়, আমরা তখনই বাধা দেব।
শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করলে সরকারের কোনো বাধা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা (সাংবাদিক) দেখেছেন তারা পদযাত্রা করেছে, তারা মানববন্ধন করেছে, যা করেছে আমরা কিন্তু কোনোটাতেই বাধা দিইনি। তারা সুন্দরভাবে এসব কর্মসূচি পালন করেছেন। ভবিষ্যতেও যদি তারা করতে চান করবেন। সেখানেও আমাদের বাধা থাকবে না। কিন্তু যখন জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করবে, জানমাল ধ্বংস করতে চাইবে তখন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। এটাই তাদের বলে দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা পদযাত্রার পরে অতি সম্প্রতি একটা লং মার্চ করল, তারুণ্যের একটা সমাবেশও করল। এখন তারা একটা বড় সমাবেশ করার জন্য আমাদের পুলিশ কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছেন। পুলিশ কমিশনার এখনো তার মতামত জানাননি। আশা করছি, শিগগিরই মতামত জানিয়ে দেবেন।
আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশ জনগণের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেয় কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটা আপনারাই দেখছেন। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে কর্মসূচি দেয়, শুধু আওয়ামী লীগের কর্মসূচি দেখছেন কেন? আরও অন্যান্য পার্টিও তো দিচ্ছে। সেগুলোও আপনার নজরে নিশ্চয়ই পড়েছে। ২০ জন নিয়ে রাস্তায় নামতে পারেন না তিনিও একটা কর্মসূচি দেওয়া শুরু করেছেন। কাজেই সবাই কর্মসূচি দিচ্ছে। সবাই রাস্তায় থাকবে। আমরা এটুকুই বলব, যতক্ষণ পর্যন্ত জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করবেন, জানমালের ক্ষতি না করবেন, গাড়ি ভাঙচুর না করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা তাদের কোনো ধরনের কর্মসূচিতে বাধা দেব না।
বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, ইইউ প্রতিনিধিদল গুম-খুন বিষয়ে জানতে চেয়েছে। তাদের জানিয়েছি, ইউএস স্টেট বিভাগের তথ্যমতে- ২০০৪, ০৫, ০৬ এ-৪৫০ জন গুম ছিল। গুমগুলোর বেশিরভাগই আত্মগোপনে চলে গিয়েছিল। ৭৬ জনের গুমের কথা বলা হয়েছিল, তার মধ্যে ২৭ জনের খবর জানানো হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ইইউ প্রতিনিধিদল রোহিঙ্গা নিয়ে সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করেছে। সবকিছুতে সন্তোষ জানিয়েছে তারা। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ইইউর চেষ্টা আছে। রোহিঙ্গা রাখতে যে ক্ষতি হচ্ছে তাও জানানো হয়েছে।
নির্বাচন বিষয়ে ইইউ প্রতিনিধিদল জানতে চেয়েছে বলে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইইউ’র প্রতিনিধিরা নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। সংবিধান অনুযায়ী যেভাবে গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছি। অহিংস নির্বাচন উপহার দিতে পারব, এমনটাও বলেছি।
মন্তব্য করুন