পুরান ঢাকার হোসেনী দালান এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ নুরজাহান বেগমকে চিকিৎসা দিতে বারডেম হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন তার ছেলে নুরুল ইসলাম। চিকিৎসক দেখানোর পরও তারা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে সড়ক বন্ধ থাকায় বাসায় ফিরতে পারছিলেন না। বসেছিলেন হাসপাতালের সামনেই।
রোববার (৭ জুলাই) দুপুরে নুরুল ইসলাম বলছিলেন, ছাত্ররা শাহবাগ আটকায়ে রেখেছে। এজন্য রিকশাও চলছে না। তাই মাকে নিয়ে বাসায় ফিরতে পারছেন না।
সড়ক অবরোধের কারণে নুরুল ইসলামের মতো অনেকেই আটকা পড়েছিলেন শাহবাগ এলাকায়। রোগী নিয়ে হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে বা বের হতেও বেগ পেতে হয়েছে। যদিও আন্দোলনকারীরা রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সগুলো পার করে দিচ্ছিলেন।
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে চলমান আন্দোলনে রোববার ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। শাহবাগ ছাড়াও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিং, সাইন্সল্যাব মোড়, নীলক্ষেত মোড়, চানখাঁরপুল এলাকায় মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের প্রবেশপথ এলাকা, পুরান ঢাকার শাখারীবাজার মোড়, আগারগাঁও ও মহাখালী এলাকায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দিনভর সড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে রাজধানীজুড়ে দীর্ঘ সময় ধরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। বিশেষ করে বিকেলে অফিস ছুটির পর এই ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করে।
পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, রোববার সপ্তাহের শুরুর দিন হওয়ায় এমনিতেই এইদিনে রাজধানীজুড়ে গাড়ির চাপ থাকে। এ ছাড়া পূর্ব নির্ধারিত রুটে রথযাত্রা ছিল। এরমধ্যে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধে যান চলাচল স্থবির হয়ে পরে। সন্ধ্যা পর্যন্ত এই অবরোধের কারণে চরম ভোগান্তি হয়। তবে ট্রাফিক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাঠে থেকে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, শাহবাগ ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিং অবরোধের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে শুরু বাংলামোটর, ফার্মগেটসহ আশপাশের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ওই সড়ক বন্ধের কারণে আশপাশের সড়কেও যানজটের সৃষ্টি হয়। সাইন্সল্যাব মোড় ও নীলক্ষেত মোড় অবরোধের কারণে মিরপুর সড়ক থেকে শুরু করে ধানমান্ডি-মোহাম্মদপুরসহ আশপাশের সড়কগুলোতে যানচলাচল বন্ধ থাকে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।
এতে পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার, রায় সাহেব বাজার মোড়, বংশাল, গুলিস্তান, পুরানা পল্টন, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, আগারগাঁও, মিরপুরের কাজী পাড়া, শেওড়া পাড়া ও মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকা, নিউমার্কেট, সায়েন্স ল্যাবসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ অনেক সড়কে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। চানখাঁরপুলে অবরোধের কারণে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বেলা দেড়টা থেকে ওই পথে থেমে থেমে গাড়ি চললেও বিকেল ৪টার পর থেকে ফ্লাইওভার দিয়ে রাজধানীর ভেতরে গাড়ি প্রবেশ বন্ধ থাকে। পুরো ফ্লাইওভারের উপর চার থেকে ৫ ঘণ্টা ধরে গাড়ি আটকে থাকে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী মোড়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে দেখা যায়, পদ্মা সেতু পার হয়ে দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ি সড়কের একই স্থানে দীর্ঘক্ষণ থেমে আছে। অনেক যাত্রীকে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। একই অবস্থা ছিল শাহবাগ এলাকাতেও। বিকেল ৫টার পর অফিস থেকে ঘরমুখো হাজার হাজার মানুষকে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে হাঁটতে দেখা গেছে।
বিভিন্ন সড়কে আটকে থাকা বাসের চালকেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এক জায়গাতেই দেড় থেকে দুই ঘণ্টা ধরে আটকে রয়েছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান কালবেলাকে বলেন, সড়ক অবরোধের কারণে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে যান চলাচল বন্ধ ছিল। এর প্রভাব বিভিন্ন সড়কে পড়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে যানজটের কারণে মানুষের ভোগান্তি হয়েছে। তবে পুলিশ নগরবাসীর ভোগান্তি সহনীয় করতে পুরো সময় মাঠে ছিল। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও সড়কে ছিলেন।
মন্তব্য করুন