‘বাংলাদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনাসমূহ’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে বেসরকারি গবেষণা ও মানবাধিকার সংস্থা এম্পাওয়ারমেন্ট থ্রু ল অব দ্য কমন পিপল (এলকপ)। মঙ্গলবার (২ জুলাই) রাজধানীর একটি হোটেলে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে এলকপের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান স্বাগত বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, দুর্নীতি আমাদের সমাজের মূল ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয়। রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও ন্যায়বিচারের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট করে দেয়। এই মহামারি মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি আমাদের সবাইকে একত্রিত হয়ে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে তার এক ভাষণে বলেছিলেন ‘এই বাংলার কৃষক ও শ্রমিকরা দুর্নীতি করে না, দুর্নীতি করে শিক্ষিত ব্যক্তিরা।’ আমরাই এই শিক্ষিত সমাজের অংশ। সুতরাং আমাদের উচিত দুর্নীতিবাজদের খুঁজে বের করে তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করা, তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে তাদেরকে শাস্তির সম্মুখীন করা। এতে করে আইনের সুশাসন যেমন প্রতিষ্ঠা হবে তেমনি বাংলার খেঁটে খাওয়া কৃষক, চাষি ও শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা যাবে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ এ দুর্নীতিবাজদের জায়গা হতে পারে না ।’
সেমিনারে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমিতির সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘দুর্নীতি শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকেই বাধাগ্রস্ত করে না, বৈষম্য ও দারিদ্র্যকেও বাড়িয়ে দেয়। দুর্নীতির প্রধান কারণ নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়। দুর্নীতি রোধে আমাদের নীতি আছে কিন্তু প্রয়োগ নেই। আমরা বলার সময় ঠিকই বলছি যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে কিন্তু কাজের বেলায় তার প্রয়োগ নেই। ফলে একজন দুর্নীতি করে পার পেয়ে যাচ্ছে। তাকে দেখে আরেকজন দুর্নীতি করার সাহস পেয়ে যাচ্ছে। এ কারণেই আজ দুর্নীতি এতো পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই দুর্নীতিবাজদের রুখতে সরকারকে দুষ্টচক্রকে (সিন্ডিকেট) চিহ্নিত করে তাদেরকে শাস্তির আওয়াত আনতে হবে। সব নাগরিকদের জন্য টেকসই উন্নয়ন ও দেশের ন্যায়সঙ্গত অগ্রগতি নিশ্চিত করতে আমাদের অবশ্যই শক্তিশালী অর্থনৈতিক নীতি বাস্তবায়ন এবং রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে’।
বিশেষ বক্তা গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মাসুদ আখতার বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে শক্তিশালী আইনি কাঠামো ও দুর্নীতিবিরোধী আইনের কঠোর প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যও নীতিনির্ধারকদের এগিয়ে আসতে হবে যাতে করে প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্নীতি রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে।
অনুষ্ঠান শেষে মুক্ত আলোচনার আয়োজন করা হয়। যেখানে সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, এবং মানবাধিকার কর্মীরা প্রাণবন্ত আলোচনায় অংশ নেন।
পরিশেষে এলকপের নির্বাহী পরিচালক, ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল, জাতি, গোষ্ঠী, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাসের জন্য একটি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে সেমিনারে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
মন্তব্য করুন