মৃত্তিকা সাহা
প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০৬:৫৪ এএম
অনলাইন সংস্করণ

এ বছরও কাটছে না ডলার সংকট

এ বছরও কাটছে না ডলার সংকট

দেশে ডলারের যে সংকট চলছে, তা চলতি বছরও অব্যাহত থাকবে। এটা সহজে দূর হবে না। এজন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোকেও ডলার দিয়ে সহায়তা করতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ আরও কমার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রধানত পাঁচ কারণে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট আপাতত দূর হচ্ছে না। এর প্রথমটি হচ্ছে প্রচুর অনিষ্পন্ন আমদানি দায় মেটাতে হবে। পাশাপাশি ব্যাপক আমদানির চাপও রয়েছে। অন্যদিকে বিদেশ থেকে নেওয়া স্বল্প মেয়াদি ঋণ পরিশোধে অনেক অর্থ ব্যয় হবে। এ ছাড়া দেশ থেকে পাচারও বেড়েছে এসময়ে। অন্যদিকে বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আসা কমে গেছে। এসব কারণে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট সহসাই দূর হচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলার সংকটের কারণে বর্তমানে জ্বালানি তেল, সারসহ অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করার জন্য ব্যাংকগুলোকে কেবল ডলার দেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবারও বিভিন্ন ব্যাংকের এলসি দায় পরিশোধে ১০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর চলতি জানুয়ারি মাসের প্রথম ১৯ দিনে ৭৫২ মিলিয়ন বা ৭৫ কোটি ২০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছে। ডলার সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ১৩ বিলিয়নের বেশি ডলার বাজারে ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রিজার্ভ থেকে অব্যাহতভাবে ডলার বিক্রি করায় রিজার্ভের পরিমাণও কমছে। সর্বশেষ, ১৮ জানুয়ারি দেশের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৪৫ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। আর আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৪ বিলিয়ন ডলার। যদিও দেশের ইতিহাসে ২০২১ সালের আগস্ট মাসে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক কালবেলাকে বলেন, বাজারে ডলারের সংকট আছে। এই সংকট কাটবে কিনা তা তিনটি চ্যালেঞ্জের ওপর নির্ভর করছে। মুদ্রানীতিতেও এই তিনটি চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যাপ্তি, ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে ফেডারেল রিজার্ভের আগ্রাসী কার্যক্রম এবং চীনের কভিড পরিস্থিতি। এ তিনটি চ্যালেঞ্জ যতক্ষণ বাজারে চলমান থাকবে ততক্ষণ দেশের মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক হবে না। তবে এই ডলার সংকটের মধ্যেই যেভাবে সমন্বয় করা হচ্ছে, সেভাবেই সবকিছু চলতে থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নেবে। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার অপ্রয়োজনীয় খরচও কমানো হবে।

এই প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর কালবেলাকে বলেন, চলতি বছরও ডলার সংকট অব্যাহত থাকবে। অনেক অনিষ্পত্তিকৃত এলসি আছে, আমদানির উচ্চ দায় পরিশোধের চাপও রয়েছে, অনেক স্বল্পমেয়াদি ঋণ আছে, যেগুলো এই বছরেই পরিশোধ করতে হবে। ফলে এতে বড় অঙ্কের ডলার বাইরে চলে যাবে। এ ছাড়া আরেকটি বড় কারণ অর্থ পাচার। নির্বাচনী বছরে এর পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। বেসরকারি খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য যে পরিমাণ ডলার প্রতি বছর আসত, এখন তা ব্যাপকভাবে কমে গেছে।

তিনি আরও বলেন, যতদিন পর্যন্ত না আমাদের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান দুই সূচক রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স না বাড়বে, ততদিন ডলার এই টানাপোড়েন চলবে। প্রচুর লোক বিদেশ গিয়েছে। কিন্তু তারপরও আশানুরূপ রেমিট্যান্স আসছে না। এতে ডলার সংকট আরও প্রকট হচ্ছে। তবে বছরের শেষদিকে রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু বিশ্বমন্দার আশঙ্কার মধ্যে এটা কতদিন ভালো থাকবে, সেটা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

এদিকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয় বা রিজার্ভের বড় দুই উৎস রপ্তানি ও প্রবাসী আয়েও খুব বেশি সুখবর নেই। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে বৈধ উপায়ে ওয়েজ আর্নার্স রেমিট্যান্সের বিপরীতে আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা, রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের সিআইপি সম্মাননা প্রদান, রেমিট্যান্স বিতরণ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও সহজ করা, পাশাপাশি অনিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ণ অর্থায়ন সুবিধা দেওয়া, ফিনটেক পদ্ধতির আওতায় আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অপারেটরকে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে ড্রয়িং ব্যবস্থা স্থাপনে উদ্বুদ্ধকরণ এবং রেমিট্যান্স পাঠাতে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর চার্জ ফি মওকুফ করা।

এ ছাড়া, হুন্ডি প্রতিরোধে নতুন কৌশলে নামে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সম্প্রতি হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো রেমিট্যান্সের ২৩০ জন বেনিফিশিয়ারির হিসাবে সাময়িকভাবে উত্তোলন স্থগিত করে বিএফআইইউ। বলা হয়, ভবিষ্যতে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাবে—এমন প্রতিশ্রুতি দিলে হিসাবগুলো খুলে দেওয়া হবে। হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রতিরোধে এমন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে বিএফআইইউ।

বর্তমানে প্রতি ডলার কিনতে আমদানিকারকদের ব্যাংকগুলোকে ১০৫ থেকে ১০৭ টাকা দিতে হচ্ছে। এই বাড়তি দাম দিয়েও ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনীয় ডলার পাচ্ছেন না। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, খাদ্য, সার, শিল্পের কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে ডলার সরবরাহ করেও পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারছে না। অন্যদিকে কমে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ছিল ৩ হাজার ২৪৭ কোটি ডলার।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হিটস্ট্রোকে পেপার বিক্রেতার মৃত্যু

শ্রমিকদের ভিসা সহজ করতে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি প্রবাসী প্রতিমন্ত্রী আহ্বান

মাদকদ্রব্যের অপব্যবহারবিষয়ক সম্মেলনে যোগ দিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী 

বিএনপির ৭৫ নেতা বহিষ্কার

খেলা দেখা নিয়ে অবাক তথ্য মোস্তাফিজের

চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড

মিরসরাইয়ে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা

বিশ্বজয়ী অধিনায়কের সংগ্রহে ‘১০০০’ ব্যাট

মার্ক জাকারবার্গকে টপকে গেলেন ইলন মাস্ক

থাইল্যান্ডের কাছে চিকিৎসা খাতে বিনিয়োগ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

১০

আমার দেখা ভিয়েতনাম

১১

মানুষের কষ্টে যুবলীগ ঘরে বসে থাকে না: পরশ

১২

মার্কিন সহায়তায় কি বাঁচবে ইউক্রেন?

১৩

গরমে গরিবের এসি যেন মাটির ঘর

১৪

টানা তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ, ভাঙল ৭৬ বছরের রেকর্ড

১৫

বিদেশি ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠাকরণে বাজেটে বরাদ্দ প্রয়োজন

১৬

দলবদলে সরগরম থাকবে বার্সা!

১৭

থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ সমঝোতা ও চুক্তি সই

১৮

ফ্লোরিডায় কনসাল জেনারেল হলেন সেহেলী সাবরীন

১৯

গুরুদাসপুরে বৃষ্টির প্রার্থনায় ইসতিসকার নামাজ

২০
*/ ?>
X