কৃষিখাতসহ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন এবং খাদ্য নিরাপত্তায় আগামী অর্থবছরের জন্য ৩৮ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের চেয়ে মাত্র ২ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা বেশি। শতাংশের হিসাবে মাত্র ৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। অথচ মুদ্রাস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৫ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা।
দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রাণ কৃষিখাত। শুধু তা-ই নয়, ভর্তুকি ও প্রণোদনায়ও বরাদ্দ আগের বছরের তুলনায় কম ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৭ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে প্রস্তাবিত বরাদ্দ ছিল ১৭ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়িয়ে ২৫ হাজার ৬৪৪ কোটি নির্ধারণ করেছিল সরকার। ভর্তুকি ও প্রণোদনায় এ বরাদ্দও যথেষ্ট ছিল না বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত দুই বছরে করোনায় জিডিপিতে সর্বোচ্চ অবদান রাখা সেবা খাতসহ অন্যান্য খাতে ব্যাপক ধস নেমেছিল। এমন খারাপ সময়ের মধ্যেও কৃষি খাতই দেশের অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত রাখতে পেরেছিল। কৃষকরা করোনাকে উপক্ষো করে খাদ্যপণ্য উৎপাদন করেছিলেন। এক সময় বাংলাদেশ খাদ্য ঘাটতির দেশ ছিল। বর্তমানে কৃষি খাতে উৎপাদন বেড়েছে বহুগুণ।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্ধৃতি বলেন, খাদ্যের জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। আমাদের নিজেদের প্রয়োজনীয় খাদ্য আমাদেরই উৎপাদন করতে হবে। কৃষকদের বাঁচাতে হবে, উৎপাদন বাড়াতে হবে, তা না হলে বাংলাকে বাঁচাতে পারবেন না।
তিনি বলেন, কৃষি উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত রয়েছে এবং তা অদূর ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে। সারে ভর্তুকি প্রদানের পাশাপাশি কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে যান্ত্রিকীকরণ উৎসাহিত করা হচ্ছে।
খাদ্য নিরাপত্তা প্রসঙ্গে আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, সবার জন্য খাদ্য নিশ্চিত করা এবং নিম্ন আয়ের মানুষকে মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সুরক্ষা দিতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে স্বল্প আয়ের ৫০ লাখ পরিবারকে বছরে কর্মাভাবকালীন ৫ মাস প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সমগ্র বাংলাদেশে নিম্ন আয়ের প্রায় ১ কোটি পরিবারের নিকট টিসিবি’র ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে চাল, ডাল, তেল ইত্যাদি সরবরাহ করা হচ্ছে। খাদ্যের অপচয় রোধে ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে খাদ্য গুদামের ধারণ ক্ষমতা ২১.৮৬ লাখ টনে উন্নীত করা হয়েছে এবং আগামী অর্থবছরে তা ২৯ লাখ টনে উন্নীত করা হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত নিয়ে তিনি বলেন, সময়োপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে ৩য় এবং বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে ৫ম স্থানে রয়েছে। ইলিশ উৎপাদনকারী দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১ম। জেলেদের সুরক্ষায় তাদের কর্মহীন সময়ে খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে গবাদিপশু এবং হাঁস-মুরগির টেকসই জাত উন্নয়ন, সুষম খাদ্য ব্যবস্থাপনা এবং রোগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উৎপাদন দ্বিগুণ করার কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন