দেশে খাদ্যদ্রব্যের বাজারদর ঊর্ধ্বমুখিতার প্রভাব পড়েছে সার্বিক মূল্যস্ফীতিতে। গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। খাদ্যপণ্যের বাড়তি দামের চাপে পিষ্ট সাধারণ মানুষের দিন যাপন। উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ নিলেও কোনো কাজে আসেনি। এমতাবস্থায় ক্রমবর্ধমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) প্রস্তাবিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ। একইসঙ্গে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির আশা করছে সরকার।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বাজেট বক্তৃতায় তিনি আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) এবং মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা তুলে ধরেন।
বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হচ্ছে এবং রাজস্বনীতিতেও সহায়ক নীতিকৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দিতে ফ্যামিলি কার্ড, ওএমএস ইত্যাদি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। আমাদের গৃহীত এসব নীতিকৌশলের ফলে আশা করছি আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে।
যদিও চলতি অর্থবছরের বাজেটেও একই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু তার ধারে কাছেও যাওয়া সম্ভব হয়নি। পরে যদিও লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে করা হয় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে সেই লক্ষ্যও পূরণ করা যায়নি। যার ফলে চলতি অর্থবছরজুড়েই মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী গত মে মাসে দেশের সার্বিক মূল্যষ্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
জিডিপি প্রবৃদ্ধির বিষয়ে আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ২০০৯-১০ অর্থবছর হতে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশের গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এ গতি ধরে রাখার লক্ষ্যে কৃষি ও শিল্প খাতের উৎপাদন উৎসাহিত করতে যৌক্তিক সব সহায়তা অব্যাহত রাখা হবে। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পসমূহের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং রপ্তানি ও প্রবাস আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। আশা করছি আমাদের গৃহীত এসব নীতিকৌশলের ফলে আগামী অর্থবছরে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে এবং মধ্যমেয়াদে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে পৌঁছাবে।
যদিও চলতি অর্থবছরে এই হার শুরুতে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হলেও পরে তা ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু সেই লক্ষ্যও পূরণ হচ্ছে না। বিবিএসের সম্প্রতি চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রাথমিক হিসাবে চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ।
এদিকে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে বড়জোর ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রায় কাছাকাছি প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপণ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। গত এপ্রিল মাসে আইএমএফের এক পূর্বাভাসে জানানো হয়েছিল ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৬ শতাংশ হতে পারে।
মন্তব্য করুন