গত বছরের জুনে ‘স্মার্ট’ পদ্ধতি চালু করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু মাত্র ১১ মাসের মাথায় সে নীতি থেকে সরে আসা হয়েছে। এবার ঋণের সুদহার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
বুধবার (৮ মে) কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জারিকৃত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এখন থেকে ব্যাংকগুলো চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে ঋণের সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে। সুদহার শতভাগ বাজার ভিত্তিক করতে ‘স্মার্ট’ ভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা প্রত্যাহার করা হলো।
এদিকে আরেক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নীতি সুদহার বা রেপো রেট ৫০ বেসিক পয়েন্ট বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন নীতি অনুযায়ী, ৯ মে থেকে রেপো রেট হবে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। প্রজ্ঞাপনে নীতি সুদের করিডরের ঊর্ধ্বসীমা এবং নিম্নসীমাও বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নীতি সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং ল্যান্ডিং ফ্যাসিলিটির (এসএলএফ) ক্ষেত্রে সুদহার ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ১০ শতাংশে এবং নীতি সুদহার করিডরের নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিক পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন সিদ্ধান্তের ফলে দেশে ব্যাংক ঋণের সুদহার আরো বাড়বে। গত মাসে ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
তবে বর্তমানে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা অনুসরণের মাধ্যমে ব্যাংক ঋণের সুদহার সম্পূর্ণরূপে বাজারভিত্তিক করার লক্ষ্যে ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘স্মার্ট’ ভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা প্রত্যাহার করা হলো। এক্ষেত্রে ব্যাংকখাতে ঋণের চাহিদা ও ঋণযোগ্য তহবিলের জোগান সাপেক্ষে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণের সুদহার নির্ধারিত হবে। এ ছাড়া ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত নির্দেশনা মানতে হবে।
ক) ব্যাংকগুলো ঋণের খাতভিত্তিক সুদের হার ঘোষণা করবে এবং তুলনামূলক ঝুঁকি বিবেচনায় গ্রাহকভেদে ঘোষিত হার অপেক্ষা ১ শতাংশ কম বা বেশি হারে ঋণ প্রদান করতে পারবে।
খ) ঋণের মঞ্জুরিপত্রে উক্ত ঋণের সুদহার অপরিবর্তনশীল (ফিক্সড রেট) বা পরিবর্তনশীল (ভেরিয়েবল রেট) তা উল্লেখ থাকতে হবে। কোনো ঋণের সুদহার পরিবর্তনশীল হলে তা বছরে সর্বোচ্চ কতবার বৃদ্ধি করা হবে এবং উক্ত বৃদ্ধি কত শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, তা আবশ্যিকভাবে মঞ্জুরিপত্রে উল্লেখ থাকতে হবে।
গ) কোনো ঋণ অথবা ঋণের কিস্তি সম্পূর্ণ বা আংশিক মেয়াদোত্তীর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হলে যে সময়ের জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ হবে, উক্ত সময়ে চলমান ঋণ বা তলবি ঋণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ঋণ স্থিতির ওপর এবং মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ কিস্তির ওপর সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৫ শতাংশ দণ্ড সুদ আরোপ করা যাবে।
ঘ) ব্যাংক কর্তৃক ঘোষিত সুদহারের অতিরিক্ত কোনো সার্ভিস চার্জ আরোপ বা আদায় করা যাবে না।
ঙ) বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকার কর্তৃক গঠিত প্রণোদনা প্যাকেজ, বিশেষ তহবিল, পুনঃঅর্থায়ন বা প্রাক-অর্থায়ন তহবিলের আওতায় প্রদত্ত ঋণের সুদহার নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট তহবিলের জন্য প্রণীত নীতিমালা প্রযোজ্য হবে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ২০১২ সালের ২৫ জানুয়ারি জারিকৃত বিআারপিডি সার্কুলার নম্বর-৪ এর নির্দেশনা মোতাবেক সংশ্লিষ্ট মাসের ৭ তারিখের মধ্যে উক্ত মানের ঘোষিত সুদহার বিবরণী ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে এন্টারপ্রাইজ ডেটা ওয়্যারহাউজে (ইডিডব্লিউ) আপলোড চলমান থাকবে।
মন্তব্য করুন