ঈদের আনন্দকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে প্রতিবছরের মতো এবারও নতুন নোট বিনিময়ের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে আজ ৩১ মার্চ থেকে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে মোট ১০৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
৯ এপ্রিল পর্যন্ত (সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত) নতুন নোট বিনিময় করতে পারবেন সাধারণ মানুষ। প্রথমবারের মতো এবার বিতরণ হচ্ছে না বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে। নিরাপত্তাজনিত কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকে এবার নতুন নোট বিনিময় করার সুযোগ থাকবে না বলে জানা গেছে।
এবার রোজার ঈদ উপলক্ষে আগামীকাল থেকে ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের ৮০টি শাখার মাধ্যমে নতুন নোট বিনিময় শুরু করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গতবার যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৪০টি শাখার মাধ্যমে নতুন টাকার নোট বিতরণ করা হয়েছিল। সাপ্তাহিক দুই দিন ছুটি ছাড়া ৫, ১০, ২০, ৫০ ও ১০০ টাকার নতুন নোট সংগ্রহ করা যাবে আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত। আট দিন এসব শাখায় নতুন নোট নিতে পারবেন গ্রাহকরা। তবে একজন ব্যক্তি একাধিকবার নতুন নোট গ্রহণ করতে পারবেন না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক কালবেলাকে বলেন, একজন গ্রাহক মোট সাড়ে ১৮ হাজার টাকার নতুন নোট নিতে পারবেন পুরোনো টাকার বিনিময়ে। প্রতিটি শাখাকে দৈনিক কমপক্ষে ৯০ জনকে নতুন টাকা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ হিসাবে একটি শাখা দৈনিক কমপক্ষে ১৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকার নতুন নোট বিতরণ করবে। আর একদিনে ৮০টি শাখার মাধ্যমে বিতরণ হবে ১৩ কোটি ৩২ লাখ টাকার নতুন নোট। এভাবে আট দিনে নতুন নোট ছাড়া হবে ১০৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকার নতুন নোট। এ পরিমাণ নোট চাহিদার তুলনায় একেবারেই নগন্য।
সাধারণত বছরে দুই ঈদে নতুন টাকার নোট ছাড়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখার মাধ্যমে প্রতিবার ২৫ থেকে ৩৩ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট ছাড়া হয়।
আঙুলের ছাপ দিয়ে ঢাকার মতিঝিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৩০ তলা ভবনের নিচ তলা থেকে নতুন টাকা সংগ্রহ করতে পারতেন গ্রাহকরা। গতবার এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ হাজার টাকার নতুন নোট সংগ্রহ করতে পেরেছিল। গত ঈদে ১৫ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট ছাড়তে ৫টি কাউন্টার খুলেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখায় চাহিদার তুলনায় গ্রাহকরা নতুন টাকার নোট না পাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকমুখী হন অনেকেই। প্রতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দৈনিক গড়ে চার থেকে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি নতুন টাকা নিয়ে থাকেন।
কিন্তু এবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা নেওয়ার সুবিধা বন্ধ রাখার বিষয়ে মেজবাউল হক বলেন, নতুন টাকার নোট যাতে গ্রাহকরা নিতে পারেন, সেজন্য ব্যাংকের শাখা সংখ্যা বাড়িয়ে ৮০টিতে উন্নীত করা হয়েছে। তাদের চাহিদা অনুযায়ী নতুন টাকার নোট দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক কেপিআই (কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন) ভুক্ত এরিয়া হওয়ায় অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাধারণের প্রবেশ সংকোচন করা হয়েছে। এ কারণে নতুন টাকা বিতরণ করবে না বাংলাদেশ ব্যাংক।
কি পয়েন্ট ইন্স্টলেশন বা কেপিআই হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত কোনো প্রতিষ্ঠান/কারখানা/ জনস্বার্থে ব্যবহৃত স্থাপনা যেগুলো দেশের যুদ্ধ সামর্থ্য অথবা জাতীয় অর্থনীতির দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং যা ধ্বংসপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশের যুদ্ধ কিংবা প্রতিরক্ষা সামর্থ্য বা জাতীয় অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়- এমন স্থাপনা। যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে থাকে।
গত ২০ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, ৩১ মার্চ থেকে নতুন টাকা পাওয়া যাবে ব্যাংকের শাখায়। কিন্তু তার এক সপ্তাহ আগেই মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছে চলে গেছে চকচকে নতুন টাকার সব ধরনের নোট। ঘোষণার পরের দিন থেকেই কোনো কোনো ব্যবসায়ীর কাছে পাওয়া গিয়েছে নতুন টাকার নোট। আগেভাগে আসা এ নোটের দামও হাঁকছেন বেশি করে।
মন্তব্য করুন