বিশ্বব্যাংক থেকে সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশের কাছে ১৮ দশমিক ১২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পাবে আইডিএ। যা বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণের ৩৩ শতাংশ। যা সব থেকে বেশি।
এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের অঙ্গভুক্ত প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) বাংলাদেশকে কম সুদে ঋণ দিয়ে যাচ্ছে।
আইডিএ ঋণের সার্ভিস চার্জ শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং সুদহার ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। দুটি মিলিয়ে ২ শতাংশ হয়। অউত্তোলিত অর্থায়ন স্থিতির ওপর বছরে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ কমিটমেন্ট ফি দিতে হবে। ঋণের কিস্তি অব্যাহতি প্রথম পাঁচ বছর ৫ বছর। আর পরিশোধ করতে হবে পরবর্তী ৩০ বছরে। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত বাংলাদেশ চার হাজার কোটি ডলারের বেশি আইডিএ ঋণ নিয়েছে। বর্তমানে দেশের চলমান প্রকল্পগুলোতে আইডিএ তহবিল রয়েছে ১৬০০ কোটি ডলারের বেশি।
ইআরডি প্রকাশিত ‘ডেবট লাইয়াবিলিটিস টু মেজর ডেভেলপমেন্ট পার্টনার’ থেকে জানা গেছে এসব তথ্য।
বিশ্বব্যাংকের পরই এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) কাছে বেশি ঋণ বাংলাদেশের, যার পরিমাণ ১৩ দশমিক ২৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ঋণ দেওয়ার দিক থেকে তিন নম্বরে জাপান, যার পরিমাণ ৯ দশমিক ২১৩ বিলিয়ন ডলার।
এছাড়া রাশিয়া ৫, চীন ৪ দশমিক ৭৬, ভারত ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া ৭৪৩ মিলিয়ন, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) ৬৬৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। মোট ১০টি উন্নয়ন সহযোগী ৫৫ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাবে বাংলাদেশের কাছ থেকে।
এদিকে দেশের বৈদেশিক ঋণের বোঝা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এক বছরের ব্যবধানে এই ঋণ বেড়েছে প্রায় চার বিলিয়নের বেশি। আর শুধু সরকারেরই বিদেশি ঋণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার।
এতে ২০২৩ সাল শেষে বিদেশি ঋণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। তবে বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকট ও মূল্যস্ফীতির কারণে বেসরকারি বিদেশি ঋণ কমেছে। এর প্রভাবে দেশের বিদেশি বাণিজ্যের হিসাব ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সম্প্রতি বড় বড় মেগা প্রকল্প গ্রহণ করায় বিদেশি ঋণ বাড়ছে। প্রকল্পগুলোয় অতিরিক্ত খরচ হওয়ায় এটি দেশের জন্য সংকট তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সাল শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০০ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৭৯ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। আর দেশের বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ২০ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার।
২০২২ সাল শেষে এর পরিমাণ ছিল ৯৬ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭২ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। আর দেশের বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ২৪ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরে বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৪ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশি ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের আরও সতকর্তা অবলম্বন করার দরকার ছিল। সক্ষমতা অনুযায়ী বিদেশি ঋণ নিতে হয়। বর্তমানে যে পরিমাণ বিদেশি ঋণ রয়েছে, তা পরিশোধে সরকার চাপে পড়বে।
তথ্য বলছে, গত এক বছরে সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশি ঋণের পরিমাণ বাড়লেও কমেছে বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণের পরিমাণ। ২০২৩ সালে সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৭ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে বেসরকারি খাতের ঋণ কমেছে ৩ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। বেসরকারি খাতের বেশির ভাগ স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ কমেছে।
মন্তব্য করুন