বর্তমানে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে- রাজস্ব আহরণ ও বাজেট বাস্তবায়নে শ্লথ গতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ব্যাংকে তারল্য সংকট, রপ্তানি, প্রবাসী আয় ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া। এর পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগসহ বহিস্থ খাতের প্রায় সবগুলো সূচকে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
শনিবার (১৬ মার্চ) ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় ওঠে আসে। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে তিনটি বিষয়কে মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করে বাস্তবতার নিরিখে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের পরামর্শ দেয় সিপিডি।
সংবাদ সম্মেলনে এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানটির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষক মুনতাসীর কামাল প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি বলেছে, বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বড় ধরনের চাপের মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষের জীবনযাত্রা সংকটে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করাই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। এজন্য তিনটি বিষয়কে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
এক, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া; দুই, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া, যাতে ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে রাজস্ব আয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যয় করা সম্ভব হয়; তিন, দক্ষতার সঙ্গে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি ব্যয় করা, যাতে অর্থের অপচয় না হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করাই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের মূল্য উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। সে জন্য প্রয়োজনীয় মধ্যমেয়াদি সংস্কার করতে হবে।
তিনি বলেন, গত ১০-১১ বছর ধরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আহরণে বড় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও আরও বড় এই ঘাটতি থাকবে; বছর শেষে তা ৮২ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। সরকারের বাজেট ঘাটতি কমলেও ঘাটতি নিরসনে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ওপর সরকারের নির্ভরশীলতা বেড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে মূল্যস্ফীতি কমানো ছিল বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। তা বাস্তবায়নে সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে; কিন্তু কেউ বাজারকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে সাত দিনে ৫০ কোটি টাকা লাভ করতে পারলে ৫০ লাখ বা এক কোটি টাকা জরিমানা করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। সে জন্য বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে; এবং তা দৃশ্যমান হতে হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সম্প্রতি দুটি ব্যাংকের একীভূত হওয়ার ঘটনা ইতিবাচক। ব্যাংকগুলো দুর্বল হওয়ার পেছনে বাস্তব কারণ ছিল। দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় চতুর্থ প্রজন্মের এতগুলো ব্যাংকের প্রয়োজন ছিল কি না, সেটা একটা প্রশ্ন। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোতে সুশাসনের অভাব ছিল দৃশ্যমান। যেসব কারণে ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়েছে, সেই সব কারণগুলো আমলেও নেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। সেটা না করে শুধু একীভূত করা হলে কার্যকর কিছু হবে না।
মন্তব্য করুন