ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে মোট ৩৮টি ব্যাংককে দুর্বল ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করে প্রতিবেদন তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুর্বল ও সবল ব্যাংকের গোপন এ তালিকা রিসার্চের জন্য করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক।
গোপন ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১২ ব্যাংকের অবস্থা খুবই খারাপ; এ ছাড়া ৯টি ব্যাংক ইতোমধ্যে রেড জোনে চলে গেছে। অপর ৩টির অবস্থান ইয়েলো জোনে অর্থাৎ রেড জোনের খুব কাছাকাছি রয়েছে। সব মিলিয়ে ৩৮টি ব্যাংককে দুর্বল ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর স্বাস্থ্য ভালো আছে ১৬টি ব্যাংকের।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, দুর্বল ও সবল ব্যাংকের তালিকা রিসার্চের জন্য করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল স্টেবিলিটি ডিপার্টমেন্ট ব্যাংকগুলোর ছয়টি কম্পোনেন্ট নিয়ে এসব ব্যাংকের তালিকা করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংক হেলথ ইনডেক্স অ্যান্ড হিট ম্যাপ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। সম্প্রতি ২০২৩ সালের জুন থেকে অর্ধ-বার্ষিক আর্থিক কর্মক্ষমতার ভিত্তিতে অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য ব্যাংকের স্বাস্থ্য সূচক তৈরি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা বিভাগ।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ছয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ মোট ৩৮টি ব্যাংককে দুর্বল ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ৫৪ ব্যাংকের অবস্থা বিশ্লেষণ করা হয়। যেখানে ১২টি ব্যাংকের অবস্থান অত্যন্ত নাজুক, যার ৯টি ইতোমধ্যে রেড জোনে চলে গেছে। ইয়েলো জোনে রয়েছে ২৯টি ব্যাংক আর ৩টি ব্যাংক রেড জোনের খুব কাছাকাছি অবস্থান। তবে অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্য সূচক গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মূলত এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে প্রেস বিফ্রিং ডেকেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
এদিন সংবাদ সম্মেলনে মেজবাউল হক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ছয়টি কম্পোনেন্ট নিয়ে দুর্বল-সবল ব্যাংকের তালিকা করেছে। এটা আমাদের নিজস্ব রিসার্চের জন্য করা হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার জন্য নয়। তাছাড়া কোন ব্যাংক দুর্বল এটা তো জানা। শেয়ারবাজার থেকেও চিত্র আপনারা দেখতে পান।
মুখপাত্র বলেন, আমাদের সব রিপোর্ট পাবলিকের জন্য করা হয় না। বেশকিছু রিপোর্ট জাতীয় স্বার্থে গোপন করতে হবে। ব্যাংকগুলোর ওপর ক্যামেলস রেটিং কখনো পাবলিক হওয়ার জন্য নয়, এটা গোপনীয়। আমাদের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট বিভিন্ন কম্পোনেন্ট নিয়ে অ্যাসেসমেন্ট করে। রেগুলার ফাইনেন্সিয়াল রিক্স ম্যানেজমেন্টের জন্য করা হয়, এটা প্রকৃত হেল্থ ইন্ডিকেটর নয়।
এ সময় তিনি আরও বলেন, ব্যাংকগুলোকে শ্রেণিকরণ করতে একটা পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক করেছি। যেখানে চারটি ক্যাটাগরিতে ব্যাংকগুলোকে মুল্যায়ন করা হবে। চলতি বছরের ব্যালেন্স শিটের ওপর ভিত্তি করে এটা করা হবে। যেটা কার্যকর হবে ২০২৫ এর মে মাস থেকে।
একীভূত নিয়ে তিনি বলেন, মার্জারের বিশ্বব্যাপী প্রক্রিয়া রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্বতাও থাকবে মার্জারের ক্ষেত্রে। এখানে দুর্বল ব্যাংক সবল ব্যাংক হতে পারে আবার সবল ব্যাংক আরও সবল ব্যাংক হতে পারে। পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী কোনো কোন দুর্বল ব্যাংক ইচ্ছাকৃতভাবে মার্জার না হয় তাহলে আগামী ডিসেম্বরের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে মার্জার করে দেবে।
মন্তব্য করুন