রপ্তানি কমে যাওয়া, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ-সংকট এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি কমিয়ে দিচ্ছে বলে মনে করছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। সে কারণে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমার পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। একইসঙ্গে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে বলেও মনে করছে সংস্থাটি। এডিবির ধারণা, চলতি বছর শেষে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ২০ শতাংশ।
এডিবির এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকের ডিসেম্বর সংস্করণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি। প্রতিবেদনে এডিবি জানিয়েছে, আগামী ৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ঠিক কতটা কমানো হয়েছে, তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।
তবে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা কালবেলাকে জানান, বাংলাদেশের জন্য ৬ দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস করা হয়েছে। এডিবি এর আগে পূর্বাভাস দিয়েছিল যে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ হতে পারে। যদিও চলতি অর্থবছরে সাড়ে সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।
এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব কারণে বাংলাদেশের প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে না, তার একটি হলো বাংলাদেশের পণ্যের গন্তব্য দেশগুলোতে অর্থনীতির গতি কমে যাওয়া। এডিবির মতে, যেসব দেশে বাংলাদেশ রপ্তানিপণ্য পাঠায়, সেসব দেশে অর্থনীতি ধীর হয়ে পড়েছে। সে কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি ও উৎপাদন খাতে মাঝারি ধরনের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে মালদ্বীপের প্রবৃদ্ধি কমবে বলে পূর্ভাবাস দিয়েছে এডিবি।
প্রবৃদ্ধি কমার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি বাড়বে বলে মনে করছে এডিবি। সংস্থাটির মতে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। অবশ্য কত বাড়বে, তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেনি সংস্থাটি। প্রতিবেদনে এডিবি জানিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ও নেপালে এখনো উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে।
বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে এডিবি বলেছে, নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও গত জুলাই-অক্টোবর সময়ে প্রতি মাসে মূল্যস্ফীতির হার প্রায় দুই অঙ্কের ঘরের কাছাকাছি ছিল। এডিবি আশা করে, আসন্ন মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি সহনীয় হতে পারে, যদি সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকে। এ ছাড়া বাজারভিত্তিক মুদ্রানীতি প্রচলনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারের পণ্যের দাম কম থাকলেও মূল্যস্ফীতি কমতে পারে। এ ছাড়া ভালো ফলনও মূল্যস্ফীতি কমাতে পারে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ছাড়াও এ বছর চারটি দেশের মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। অন্য দেশগুলো হলো কাজাখস্তান, মিয়ানমার ও কোরিয়া।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক প্রতিবেদনে এডিবি বলেছে, ২০২৩ সালে এশিয়ার গড় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে। ২০২৪ সালে তা কিছুটা কমে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। অন্যদিকে এশিয়ার গড় মূল্যস্ফীতিও ২০২৩ সালে কিছুটা কমে সাড়ে ৩ শতাংশ হতে পারে। তবে ২০২৪ সালে তা বেড়ে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে। বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে ২০২৪ সালে ভারতে ৬ শতাংশ এবং চীনে ৪ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি।
মন্তব্য করুন