মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২৩, ১০:২৭ এএম
আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২৩, ১০:২৮ এএম
অনলাইন সংস্করণ

যুক্তরাষ্ট্র থেকে কমেছে আমদানি-রপ্তানি

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে অর্থনীতিতে। দেশের তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি সাম্প্রতিক সময়ে কমেছে। খুব শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানিতে গতি আসবে– এমন আশাবাদের সুযোগ দেখছেন না পোশাক খাতের রপ্তানিকারক উদ্যোক্তারা।

সম্প্রতিকালে বাংলাদেশ ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর দেশওয়ারি রপ্তানির বিভিন্ন প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বহুমুখী বৈদেশিক বাণিজ্য কমতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি এবং বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি কমেছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহও কমে শীর্ষ থেকে চতুর্থ অবস্থানে নেমেছে। কমে গেছে বৈদেশিক অনুদান আসার প্রবণতাও। সামগ্রিকভাবে কমেছে দেশটি থেকে বাংলাদেশের ঋণ পাওয়ার প্রবণতাও।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর দেশওয়ারি রপ্তানি প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত গত চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ কম। এ সময় মোট ২৫৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয় দেশটিতে। এই চিত্রের বিপরীতে কানাডায় রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। জোটগত প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি বেড়েছে ৪ শতাংশের মতো। অপ্রচলিত বাজারেও রপ্তানি বেড়েছে এ সময়। চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মতো অপ্রচলিত বাজারে গত চার মাসে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৬ শতাংশের মতো। রপ্তানির পরিমাণ ১ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার।

একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। দুই বছর আগে মোট পোশাক রপ্তানি আয়ের ২২ শতাংশ ছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে। গত অক্টোবর পর্যন্ত এ হার ১৮ শতাংশের কম। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল প্রায় ২০ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৫১ কোটি ১৭ লাখ ডলার। যা মোট রেমিট্যান্সের ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং মোট রেমিট্যান্স আসার মধ্যে অবস্থান চতুর্থ। গত অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স আহরণে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ছিল শীর্ষে। আলোচ্য সময়ে শীর্ষ অবস্থান থেকে নেমে গেছে চতুর্থ অবস্থানে। গত অর্থবছরের একই সময়ে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ৯৯ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। ওই সময়ে যা মোট রেমিট্যান্সের ১৭ দশমিক ২ শতাংশ ছিল। ওই সময়ের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আসা কমেছে ৪৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ৯৯ কোটি ৯৮ লাখ ডলার, অক্টোবর-ডিসেম্বরে এসেছে ৯৬ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিলে ৮৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, এপ্রিল-জুনে ৭২ কোটি ৮ লাখ ডলার ও জুলাই-সেপ্টেম্বরে এসেছে ৫১ কোটি ১৭ লাখ ডলার। প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী প্রতি প্রান্তিকেই রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমছে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের আমদানি কমেছে। ডলার সংকটের কারণে গত বছরের এপ্রিল থেকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। বর্তমানে ওইসব পদক্ষেপ আরও কঠোর করা হয়েছে। ফলে সার্বিকভাবেই আমদানি কমেছে। এর অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকেও আমদানি কমেছে। গত বছরের এপ্রিল-জুনে আমদানি করা হয়েছিল ৮২ কোটি ৯ লাখ ডলারের পণ্য। জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ৫৬ কোটি ডলারের ও এপ্রিল জুনে ৪৪ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি প্রান্তিকেই আমদানি কমছে। গত বছরের এপ্রিল-জুনের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে আমদানি কমেছে ৪৬ শতাংশ। একই সময়ে মোট আমদানি কমেছে ২৪ শতাংশ। গত অর্থবছরে আমদানি কমেছিল ১৬ শতাংশ। মোট আমদানির মাত্র ৩ দশমিক ৭ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে করা হয়।

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোক্তাদের সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের (এফডিআই) স্থিতিও কমছে। জুন পর্যন্ত তাদের বিনিয়োগের নিট স্থিতি ছিল ৩৯৫ কোটি ডলার। এর আগে গত ডিসেম্বরে ছিল ৪১০ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। আলোচ্য সময়ে বিনিয়োগের স্থিতি কমেছে ৪ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেসরকারি ঋণের বড় অংশই আসে আমদানির মাধ্যমে। আমদানি কম হওয়ায় এ খাতে ঋণের প্রবাহও কমেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বেসরকারি খাতে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল ৭৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। গত জুনে তা কমে ৬৯ কোটি ডলারে নামে। ওই সময়ে ঋণের স্থিতি কমেছে ১১ শতাংশ। তবে বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ বাড়ছে। জুলাইয়ে ছিল ৬২ কোটি ডলার, আগস্টে তা বেড়ে হয় ৭১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭১ কোটি ৯৮ লাখ ডলারে। আগের ঋণের মেয়াদ বাড়ানো ও বাড়তি সুদের কারণে এ খাতে পরিশোধ হচ্ছে কম। যে কারণে স্থিতি বেড়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম বলেন, একতরফা নির্বাচন বিদেশিরা মেনে নেবে না। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে শুধু অর্থনৈতিক বিষয়ই নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রে নানা ধরনের বাধা আসতে পারে। বড় কোনো দেশ থেকে এ ধরনের বাধা এলে অর্থনীতির ক্ষতি হবে। দেশের ইমেজ নষ্ট হবে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য হ্রাস পাওয়ার অনেক কারণের মধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয়ও জড়িত। এ ছাড়া বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগে দেশটির অবস্থান শীর্ষ কাতারে রয়েছে। পাশাপাশি অনুদান থেকেও বৈদেশিক মুদ্রা আসে। বৈদেশিক ঋণের অন্যতম উৎস যুক্তরাষ্ট্র। এসব খাতে দেশটি থেকে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ কমে গেলে বাংলাদেশে ডলারের প্রবাহে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। হঠাৎ করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বিকল্প উৎস খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। তখন ডলার সংকট আরও প্রকট হবে। দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে এর ভয়ানক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কালবেলায় সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিবন্ধী রনি পেল হুইলচেয়ার

শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে হবে : আবু হানিফ

ক্রীড়াবিদ শওকত আলীর স্মরণে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল

শাহরিয়ার কবির গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

রাসূল (স.) আদর্শ ধারণ করে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে

ঝিনাইদহে নাশকতা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী সুজনের গ্রেপ্তারের খবরে বিএনপির আনন্দ মিছিল

মানিকগঞ্জে ধলেশ্বরী নদী থেকে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার

ভূমি উপদেষ্টার পরিদর্শন, হয়রানি ছাড়া নামজারি খতিয়ান পেয়ে উৎফুল্ল নাজিম  

১০

চট্টগ্রামে জশনে জুলুশে মানুষের ঢল  

১১

বন্যা পরবর্তী প্রাণী চিকিৎসায় বাকৃবি শিক্ষার্থীরা

১২

‘দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তির জন্য রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে’

১৩

নার্সের ভুলে ৩ দিনের শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ

১৪

‘স্মরণকালের সবচেয়ে বড় গণসমাবেশ’ করার প্রস্তুতি বিএনপির

১৫

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত

১৬

রাত ১টার মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস

১৭

সিরাজগঞ্জে কবরস্থানে মিলল অস্ত্র ও গুলি

১৮

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে জামায়াতের নায়েবে আমিরের মতবিনিময়

১৯

২৮ থেকে ৪২তম বিসিএসের বঞ্চিত সেই ক্যাডাররা ফের বঞ্চনার শিকার

২০
X