মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলো ডলার কেনার জন্য সর্বোচ্চ ১১৫ টাকা ৫০ পয়সা দিতে পারবে। আর সর্বোচ্চ ১১৭ টাকায় বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হয়। কেনার চেয়ে বিক্রির পার্থক্য কোনো মতেই দেড় টাকার বেশি হবে না।
আজ সোমবার (১৩ নভেম্বর) মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে সোমবার বিদেশি এক্সেচেঞ্জ হাউসের প্রতিনিধি দলের সঙ্গেও বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোকে ব্যাংকের কাছে রেমিট্যান্স বিক্রির ক্ষেত্রে এবিবি ও বাফেদার নির্ধারিত দর মেনে চলতে বলা হয়।
এর আগে, ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সে ইচ্ছেমতো প্রণোদনা দিয়ে ডলার কিনেছিল। এতেই গত মঙ্গলবার ডলারের দর এক লাফে ১২-১৪ টাকা বেড়ে ১২২ থেকে ১২৪ টাকায় উঠেছিল। ব্যাংকের ডলার রেট বৃদ্ধির কারণে খোলা বাজারেও দাম বেড়েছিল। গত বৃহস্পতিবার খোলা বাজারে সর্বোচ্চ ১২৭ টাকায় ডলার বেচাকেনা হয়েছিল, যা এ যাবতকালে সর্বোচ্চ।
এমন পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার ডলারের দাম ঠিক করে দেওয়া দুই সংগঠন ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) সঙ্গে বসেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে এই দুই সংগঠনের নির্ধারিত দরের বেশি ডলার বেচাকেনা না করার নির্দেশ দেওয়া হয় ব্যাংকগুলোকে। তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈঠকে ডলার কেনার জন্য সর্বোচ্চ ১১৫ টাকা ৫০ পয়সা দিতে পারবে। আর সর্বোচ্চ ১১৭ টাকায় বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হয়। কেনার চেয়ে বিক্রির পার্থক্য কোনো মতেই দেড় টাকার বেশি হবে না।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, এভাবে দর বেঁধে দিলে মানি চেঞ্জারগুলো ডলার পাবে না। কারণে যে দরে কিনতে বলা হয়। সে দরে ডলার বাজারে পাওয়াও যায় না। আর ব্যাংকও এ দামে ডলার বিক্রি করে না। তাই এভাবে বেঁধে দিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হেলাল সিকদার কালবেলাকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক মৌখিকভাবে একটি নির্দেশনা দিয়েছে। এবিবি ও বাফেদার নির্ধারিত রেটের চেয়ে এক টাকা বেশি দিয়ে ডলার কিনতে পারব। আর বিক্রির ক্ষেত্রে এ দর হবে সর্বোচ্চ দেড় টাকা।
সূত্র জানায়, ডলার সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক আগের দেনা শোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে। নতুন করে এলসি খোলায় অধিক সতর্কতা দেখাচ্ছে। এ অবস্থায় রেমিট্যান্সে ডলার কেনার দর তদারকিতে কিছুটা শিথিলতা দেখিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রেমিট্যান্স কেনার ক্ষেত্রে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হলেও ব্যাংক প্রণোদনা ইচ্ছেমতো দেওয়ার সুযোগ দিয়েছিল। এ খবরে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো ডলারের দাম ১২-১৪ টাকা বাড়িয়ে দেয়। আর দেশের ব্যাংকগুলো তা প্রতিযোগিতা করে কিনছেও। এতেই এক লাফে ডলারের দর বেড়ে গত সপ্তাহে ১২২ থেকে ১২৪ টাকা ওঠে যায়। এমন পরিস্থিতি নতুন করে আবার অস্থিরতা শুরু হতে থাকে। একদিনের মাথায় খোলা বাজারেও ডলার দর বেড়ে যায়। গত সপ্তাহের শেষের দিকে খোলা বাজারে ১২৭ থেকে ১২৮ টাকায় ডলার বিক্রি হয়।
এমন পরিস্থিতে গত বুধবার ডলারের দাম আর বাড়ানো যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয় এবিবি ও বাফেদা। প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কিনতে হবে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সা দামে। আর আমদানি দায় মেটাতে ডলারের দাম নেওয়া যাবে আগের মতোই ১১১ টাকা। তবে প্রবাসী আয়ে সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি ব্যাংকও একই পরিমাণ প্রণোদনা দিতে পারবে। ফলে প্রবাসী আয় পাঠালে ডলারপ্রতি সর্বোচ্চ ১১৬ টাকা অফার করতে পারবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। এর পর বাংলাদেশ ব্যাংক এই দুই সংগঠনের সঙ্গে বসে। সেখানে নির্দেশনা দেয়া হয়— এবিবি ও বাফেদার নির্ধারিত দরের বেশি ডলার বেচাকেনা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, একেক ব্যাংক একেক রকম দর দেওয়ার পর বাজার অস্থিতিশীল হয়েছে। এখন ব্যাংকগুলো বলেছে সবাই মিলে তারা ১১৬ টাকার মধ্যে থাকবে। নির্ধারিত দরের চেয়ে কেউ বেশি দামে ডলার কেনাবেচা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন