বিভিন্ন বানিজ্যিক ব্যাংকের পদত্যাগ করা ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক (এসবিএসি) হাবিবুর রহমান ও পদ্মা ব্যাংকের এমডি তারেক রিয়াজ খানের সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার ও ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কক্ষে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আগামীকাল ব্যাংক এশিয়ার এমডির পদ থেকে আরিফ বিল্লাহ আদিল চৌধুরীর সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকে ডাকা হয়েছে ব্যাংক এশিয়ার চেয়ারম্যান রোমো রউফ চৌধুরীকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, বর্তমান আর্থিক সংকটের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাইছে না, নতুন করে কোনো ব্যাংকে সংকট তৈরি হোক। এ ছাড়া ব্যাংকের এমডিদের পেশাদারত্বের সঙ্গে ব্যাংক পরিচালনা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর এই চেষ্টার অংশ হিসেবেই ন্যাশনাল ব্যাংকের পদত্যাগকারী এমডি মেহমুদ হোসেনকে দায়িত্বে ফিরিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত সপ্তাহে এমডির পদ থেকে সরে দাঁড়ান পদ্মা ব্যাংকের এমডি তারেক রিয়াজ খান এবং এসবিএসি ব্যাংকের এমডি হাবিবুর রহমানও পদত্যাগপত্র জমা দেন। এর আগে গত ২৬ জুলাই পদত্যাগ করেন ব্যাংক এশিয়ার এমডি আরিফ বিল্লাহ আদিল চৌধুরী। তবে এসবিএসি ব্যাংকের এমডি রোববার থেকে আবারও অফিসে যাচ্ছেন।
পদত্যাগের কারণ সম্পর্কে জানতে পদ্মা ও এসবিএসি ব্যাংকের এমডিকে ডেকে পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। সূত্র জানায়, পদ্মা ব্যাংকের এমডি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বলেছেন যে, স্ত্রী অসুস্থ থাকায় তাঁর পক্ষে ব্যাংককে সময় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ব্যাংকের কোনো পরিচালক বা চেয়ারম্যানের চাপে তিনি পদত্যাগ করেননি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে তখন তাকে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকৃত তথ্য দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। না হলে ব্যাংক খাত নিয়ে আমানতকারীদের ভেতর ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হতে পারে বলে জানানো হয়।
এসবিএসি ব্যাংকের এমডি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, তিনি আনুষ্ঠানিক ভাবে পদত্যাগ পত্র জমা দেননি। নিয়মিতই অফিস করছেন। তবে এই সময়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত পদত্যাগ সংক্রান্ত সংবাদ সম্পর্কে কোনো জবাব দেননি এমডি হাবিবুর রহমান।
ব্যাংক এশিয়ার এমডি আরিফ বিল্লাহ আদিল চৌধুরী কেন পদত্যাগ করেছেন, তা জানতে ব্যাংকের চেয়ারম্যান রোমো রউফ চৌধুরীকেও ডেকেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তিনি দেশে ফিরে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানা গেছে।
তবে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকর মুখপাত্র মেজবাউল হক সংবাদমাধ্যমকে জানান, পদ ছেড়ে দেওয়া এমডিদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। ২০১৪ সালে পরিচালকদের চাপে ব্যাংক এমডিদের পদত্যাগ ঠেকাতে একটি সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে সেই নীতিমালা খুব একটা কাজে আসেনি। ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা গ্রগণ করেছিল এস আলম গ্রুপ। দায়িত্ব নিয়েই তৎকালীন এমডিদের বাদ দিয়ে দেয় গ্রুপটি। তখন যারা নতুন এমডি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিল, তড়িঘড়ি করে তোদের অনুমোদনও দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, পরিস্থিতির বিবেচনায় অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এখন আমরা চাই না নির্দোষ কোনো এমডি পদ ছেড়ে চলে যাক। কারণ, এই মুহূর্তে ব্যাংক খাত নিয়ে এমনিতেই নানা ধরনের আস্থাহীনতা কাজ করছে।
মন্তব্য করুন