বিনিয়োগকারীদের দেওয়া মার্জিন ঋণের বিপরীতে অনাদায়ী ক্ষতি বা নেগেটিভ ইক্যুইটি দেশের পুঁজিবাজারের অন্যতম বড় সমস্যা। এই সমস্যা সমন্বয়ে প্রত্যেক ব্রোকারেজ হাউসের কাছে পৃথক পরিকল্পনা চেয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বিকাল ৩টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি ভবনে শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসগুলোর সঙ্গে বৈঠকে এ আহ্বান জানান সংস্থার চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। বৈঠকে দেশের পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ ও নেগেটিভ ইকুইটির বিষয়ে আলোচনা হয়।
বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে বৈঠকে বিএসইসির কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর ও ফারজানা লালারুখ উপস্থিত ছিলেন।
নেগেটিভ ইকুইটিকে দেশের পুঁজিবাজারের ‘ক্যান্সার’ আখ্যা দিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ বলেন, আপনারা যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তাতে উঠে এসেছে যে, সবার সমস্যা এক নয়। কার কী ধরনের সমস্যা বা কীভাবে এটাকে আপনারা সমন্বয় করতে পারেন, সেটা আলাদা আলাদা করে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রস্তাব দিলে আমরা সেটা বিবেচনা করব।
শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে গ্রাহককে দেওয়া ঋণ নির্ধারিত সময়ে ফোর্সড সেল (বাধ্যতামূলক বিক্রি) করতে না পারায় ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোতে বিপুল পরিমাণের নেগেটিভ ইকুইটির সৃষ্টি হয়। এটি ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ভয়াবহ ধসের সময় থেকে তৈরি হয়েছে। ওই সময় বড় ধস হলেও ঋণপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ফোর্সড সেল করতে না পারায় বিপুল পরিমাণের বিনিয়োগ নেগেটিভ ইকুইটিতে পরিণত হয়।
বিএসইসির তথ্যমতে, প্রভিশনিং বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি বাদে পুঁজিবাজারের সদস্যভুক্ত বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের মোট নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮২৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা। বিগত সময়ে বিএসইসি পুঁজিবাজার থেকে বিদ্যমান নেগেটিভ ইক্যুইটি অবলোপন করার উদ্দেশ্যে বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অনাদায়কৃত ক্ষতির বিপরীতে প্রভিশন রাখার নির্দেশনা প্রদান করে, যার সময়সীমা চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি অতিক্রান্ত হয়েছে।
বিশাল এই নেগেটিভ ইক্যুইটির বোঝার সমস্যা সমাধানে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছে বিএসইসি। মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি দেওয়া হয়।
বৈঠকের আলোচনায় ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তারা পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও সংস্কারে বিএসইসিকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও কার্যক্রম গ্রহণের অনুরোধ জানান। পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য নেগেটিভ ইকুইটি সমস্যার স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন বলে মতামত দেন তারা। তারা সর্বাত্মক চেষ্টা ও সহযোগিতার কথা জানান।
মন্তব্য করুন