ইসলামী ব্যাংকের বিতর্কিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মনিরুল মওলাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। রোববার (০৬ এপ্রিল) ব্যাংকের বোর্ড সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকটির ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বর্তমান অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক খানকে। ইসলামী ব্যাংকের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ওমর ফারুক খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ১৯৮৬ সালে ইসলামী ব্যাংকে যোগ দিয়ে টানা ৩৭ বছর ব্যাংকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদসহ অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওমর ফারুক খান ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকারস বাংলাদেশের অ্যাসোসিয়েট এবং ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের সার্টিফাইড ডকুমেন্টারি ক্রেডিট স্পেশালিস্ট (সিডিসিএস)। তিনি থাইল্যান্ড, ভারত, মালয়েশিয়া, সুইজারল্যান্ড ও দুবাইতে ক্রেডিট ম্যানেজমেন্টসহ ব্যাংকিং বিষয়ে বিভিন্ন সেমিনার ও প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন। ইসলামী ব্যাংকের এএমডি হিসেবে জয়েন করার আগে এনআরবি ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি।
২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফজলে কবির ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় ইসলামী ব্যাংক দখল করে এস আলম গ্রুপ। বিভিন্ন উপায়ে শুধু এই ব্যাংক থেকে তারা ৯১ হাজার কোটি টাকা বের করে নেওয়ার তথ্য উঠে এসেছে ব্যাংকের নিরীক্ষায়। এস আলম ইসলামী ব্যাংক দখলে নেওয়ার পর ব্যাংকটিতে প্রভাবশালী হয়ে উঠেন মনিরুল মওলা। দ্রুততার সঙ্গে তাকে পদোন্নতি দিয়ে প্রথমে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এমডি নিয়োগ দেওয়া হয়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ব্যাংকটির পর্ষদের বেশির ভাগ সদস্য ও অধিকাংশ ডিএমডি পলাতক অবস্থায় আত্মগোপনে চলে যান। অদৃশ্য কারণে মনিরুল মওলা বহাল তবিয়তে ছিলেন।
সূত্র জানায়, নতুন পর্ষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই মনিরুল মওলাকে অপসারণের দাবি ছিল। তবে আমরা বহিঃনিরীক্ষকের অডিট রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছিল। এখন প্রতিবেদন প্রায় শেষ পর্যায়ে। অডিট রিপোর্টে এস আলম গ্রুপের ঋণ জালিয়াতি এবং নাবিল গ্রুপের ১৩ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকার জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অনিয়মে তার সম্পৃক্ত পাওয়া গেছে। যে কারণে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে চিঠি দিয়ে তাকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ইসলামী ব্যাংক এক সময় দেশের সেরা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছিল। তখন কিছু সৎ মানুষ এটি পরিচালনা করছিলেন। দখলের পর ‘দুর্বল’ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পেছনে যাদের ভূমিকা রয়েছে তাদের অন্যতম এই মুনিরুল মওলা। তার বাড়ি চট্টগ্রামে হওয়ার সুবাদে ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেন। ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থার চরম অবনতি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংকের দুরবস্থার আসল চিত্র এতদিন আড়ালে ছিল। সরকার পতনের পর লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসছে। গত জুনের তুলনায় ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ চারগুণের বেশি বেড়ে ৩২ হাজার ৮১৭ কোটি টাকায় ঠেকেছে। এক লাখ ৫৫ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা ঋণের যা ২১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা।
মন্তব্য করুন