সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩২
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৫, ০৫:৪৩ এএম
অনলাইন সংস্করণ
আল জাজিরার প্রতিবেদন

২৫ বিলিয়ন ডলার ফেরানোর মিশনে বাংলাদেশ ব‍্যাংক গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ছবি : সংগৃহীত

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া বিপুল অর্থ দেশে ফেরত আনতে জোরালো প্রচেষ্টা শুরু করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার তীব্র বিক্ষোভের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি।

মূলত হাসিনার আমলে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক অভিজাতদের বিদেশে পাচার করা বিপুল সম্পদ অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছেন ড. আহসান এইচ মনসুর।

শুক্রবার (২৮ মার্চ) ‘বাংলাদেশ আপ এগেইন্টস টাইম টু ফাইন্ড স্টোলেন বিলিয়নস: সেন্ট্রাল ব্যাংক গভর্নর’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অনলাইন আল জাজিরা। সংবাদমাধ্যমটির ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিটকে (আই-ইউনিট) দেয়া এক সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। সাক্ষাৎকারে আহসান মনসুর বিদেশে পাচার হওয়া বিপুল অর্থ দেশে ফেরত আনার বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন।

বাংলাদেশের ১১টি প্রভাবশালী পরিবারকে টার্গেট করে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক উল্লেখ করে আল জাজিরা বলছে, প্রভাবশালী এসব পরিবারের বিরুদ্ধে গত এক দশক ধরে বৃটেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরে কোটি কোটি ডলার পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। যাদের সম্পদের সন্ধানে ১১টি বিশেষজ্ঞ দলও গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রশ্নবিদ্ধ এ সম্পদের পরিমাণ আঁতকে ওঠার মতো। ১১টি পরিবারের মধ্যে একটির বিরুদ্ধেই ১৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। যার মধ্যে একটি ব্যাংক থেকে প্রায় ৯০ শতাংশ আমানতই তুলে নিয়ে গেছে তারা। ফলত ব্যাংকটি প্রায় ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।

আহসান মনসুর, আইএমএফ-এর সাবেক অর্থনীতিবিদ। পাচারকৃত অর্থ দ্রুত উদ্ধার করা নিয়ে তিনি বেশ উদ্বিগ্ন। কেননা, দ্রুত সন্ধান না পেলে বেশির ভাগ অর্থ হাওয়া হয়ে যেতে পারে।

আল জাজিরাকে তিনি বলেছেন, আমরা জানি সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, সম্পদের পরিমাণ কমে যেতে পারে। আহসান মনসুরের সন্ধান কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ব্রিটেন। বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া আনুমানিক ২৫ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ উদ্ধার এবং জব্দ করার জন্য ইতিমধ্যেই ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কমনওয়েলথ দপ্তর এবং লন্ডনের আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে বাংলাদেশ।

আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, উল্লিখিত পরিবারগুলোর অনেকেরই এখানে বহু সম্পদ রয়েছে, বিশেষ করে লন্ডনে।

তিনি বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো আমরা এই সচেতনতা তৈরি করতে চাই যে, বিশ্ব থেকে চুরি হওয়া সম্পদের প্রিয় হচ্ছে ব্রিটেন। আর বাংলাদেশ সেই দেশগুলোর মধ্যে একটি যেখান থেকে এখানে প্রচুর চুরি হওয়া সম্পদ এসেছে।

এর আগে আল জাজিরার আই-ইউনিটের এক খবরে প্রকাশ করা হয়েছে যে, হাসিনার সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর একারই লন্ডন এবং দুবাইতে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থের সম্পদ রয়েছে। আই-ইউনিটের ওই খবরটি গত বছর প্রকাশ করা হয়। ব্রিটেনে সাইফুজ্জামান এবং তার পরিবারের ৩৬০টির বেশি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই লন্ডনে। বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন ইতিমধ্যেই সাইফুজ্জামানের ৪০টি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে এবং তাকে দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আর সাইফুজ্জামানের বিদেশে থাকা সম্পত্তি দ্রুত জব্দ করার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যেন সেগুলো বিক্রি করতে না পারে।

যদিও সাইফুজ্জামানের দাবি হচ্ছে আগের সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ‘ডাইনি-হান্ট’ শুরু করা হয়েছে। তার সম্পদ বৈধভাবে উপার্জন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক যখন এসব সম্পদ জব্দ করার দিকে মনোনিবেশ করেছে তখন আহসান মনসুর চাচ্ছেন, ব্রিটেন এবং অন্যান্য জায়গায় এসব অভিজাত পরিবারের কোটি কোটি ডলার পাচারে সহায়তাকারী আইনজীবী, ব্যাংকার এবং এস্টেট এজেন্টদেরও তদন্তের আওতায় আনা হোক।

মনসুর বলেছেন, আইন লঙ্ঘন করে অপরাধীদের পুনর্বাসনে সহায়তা করছে এমন এজেন্ট বা ব্যাংক অপারেটর সংখ্যা অনেক। এসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

গভর্নর জানিয়েছেন, পাচারকৃত অর্থের নিয়ন্ত্রণ পেতে পাঁচ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তিনি স্বীকার করেছেন যে, কর্তৃপক্ষের কাজের মাত্রা এবং জটিলতা নিয়ে লড়াই করার কারণে অর্থ উদ্ধার কার্যক্রম কিছুটা ধীরগতিতে আগাচ্ছে। তবে বৃটেন সরকার এক্ষেত্রে সহায়তা করছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এসব অপরাধী চক্রের মূল হোতার বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহের জন্য বিদেশে অর্থ পাচারে সহায়তাকারীদের সঙ্গে দর কষাকষি করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। এমনকি হারিয়ে যাওয়া অর্থ বাংলাদেশে ফেরত আনতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরিকল্পনাও রয়েছে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার পরিবর্তনের পর পাচারকৃত কোটি কোটি ডলার উদ্ধারের কার্যক্রম পরিচালনা জটিল হয়ে পড়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) তহবিল স্থগিত করে দেওয়ার ফলে বাংলাদেশে যে তদন্তকারী সংস্থা কাজ শুরু করার কথা ছিল তাদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, মার্কিন কর্মকর্তাদের পূর্ণ শক্তিতে ঢাকায় থাকার কথা ছিল। তাদেরকে ইউএসএআইডি’র মাধ্যমে অর্থায়ন করা হয়েছে। তবে তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা আর আসতে পারেনি। যা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঈদের একদিন আগে একসঙ্গে ৩ ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা-বাবা

ঈদের দিনে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষ

নারায়ণগঞ্জে যুবককে গুলি করে হত্যা

জানালার ওপার থেকে ঈদের শুভেচ্ছা জানালেন সালমান

মিয়ানমারে মানবিক সংকটের মধ্যেই বোমাবর্ষণ জান্তা সরকারের

এপ্রিলের জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ

ঈদের নামাজ শেষে জিলাপির টাকার হিসাব নিয়ে সংঘর্ষ

ঈদে মোটরসাইকেলে ঘুরতে বেরিয়ে প্রাণ গেল স্বামীর, আহত স্ত্রী

বৃষ্টি নিয়ে সুখবর দিল আবহাওয়া অফিস

তৃতীয়বারের জন্য প্রেসিডেন্ট হওয়ার উপায় খুঁজছেন ট্রাম্প!

১০

জেলেনস্কির খনিজ চুক্তি ইস্যুতে ট্রাম্পের নতুন হুঁশিয়ারি

১১

জোকোভিচকে যে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন মেসির ছেলে

১২

বোমা হামলার হুমকি ট্রাম্পের, জবাবে প্রস্তুত ইরান?

১৩

আ.লীগের ফেরার সুযোগ নেই : মিল্লাত

১৪

ঈদে ১০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি

১৫

মার্কিন যুদ্ধবিমান এবং ইরান : ভারত মহাসাগরে কী ঘটতে চলেছে?

১৬

ফেব্রুয়ারির চেয়ে মার্চে ধর্ষণের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি

১৭

কতদিন নির্বাচন ছাড়া থাকা যাবে প্রশ্ন মির্জা আব্বাসের

১৮

‘বাংলাদেশ ডে প্যারেড’ মাতাবেন জায়েদ খান

১৯

ধোনির ব্যাটিং পজিশন নিয়ে ধোঁয়াশার অবসান ঘটালেন ফ্লেমিং

২০
X