গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের মোট বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) এসেছে ১৪৬ কোটি ৮১ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এর মধ্যে শুধু বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) ইপিজেডে বিনিয়োগ এসেছে ৪২ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ডলার। অর্থাৎ গত অর্থবছরের মোট বিনিয়োগের ২৯ শতাংশই এসেছে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল বা ইপিজেডে। একইসঙ্গে গত অর্থবছরে মোট রপ্তানি আয়ের ১৬ শতাংশ এসেছে ইপিজেড থেকে।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা এ তথ্য জানায়।
রাজধানীর গ্রিন রোডের বেপজা কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান, সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. আশরাফুল কবীর, সদস্য (প্রকৌশল) মো. ইমতিয়াজ হোসেন, সদস্য (অর্থ) আ ন ম ফয়জুল হক প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বেপজার জনসংযোগ বিভাগের নির্বাহী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আবু সাঈদ মো. আনোয়ার পারভেজ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জুলাই আন্দোলনের পর পরবর্তী পরিস্থিতিতে দেশের ইপিজেডগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ২২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। তবে একই সময়ে বেড়েছে রপ্তানি। জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে বেপজার বিভিন্ন ইপিজেড থেকে রপ্তানি বেড়েছে ২২.৪১ শতাংশ, যেখানে ইপিজেড বহির্ভূত রপ্তানি বেড়েছে ১২.৮৪ শতাংশ।
বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান বলেন, ব্যবসায়ীরা দাবি করেন যে, পটপরিবর্তনের পর ৬ মাসে বাংলাদেশে বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগ কমেছে ৭১ শতাংশ। তবে এটি ইপিজেডের বাইরে। ইপিজেডগুলোতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর অর্থাৎ ছয় মাসে এফডিআই কমেছে ২২.৩৩ শতাংশ।
কেবল পটপরিবর্তনই নয়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্যও বিনিয়োগ কমেছে। তবে বিনিয়োগ কমলেও এ সময়ে ইপিজেড থেকে রপ্তানি বেড়েছে ২২.৪১ শতাংশ যেখানে ইপিজেড বহির্ভূত রপ্তানি বেড়েছে ১২.৮৪ শতাংশ।
তিনি বলেন, আমরা আশা করছি আগামীতে বিনিয়োগ বাড়বে কারণ যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প সরকার এসেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানিকৃত পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। ফলে চীনের শিল্প-কারখানাগুলো বিভিন্ন দেশে স্থানান্তরিত হবে যেখানে বাংলাদেশ সবার ওপরে আছে। একটি চীনা কোম্পানি এরই মধ্যে ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছে।
মিট দ্য প্রেসে জানানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ইপিজেডে বিনিয়োগ হয়েছিল ১৬২.৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যেখানে ২০২৪-২৫ একই সময়ে বিনিয়োগের পরিমাণ ১২৬.৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ইপিজেড থেকে রপ্তানি হয়েছিল ৩ হাজার ৩৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যেখানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ১২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বর্তমানে দেশে বেপজার অধীনে মোট আটটি ইপিজেড ও একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রাম, ঢাকা, মোংলা, কুমিল্লা, উত্তরা, ঈশ্বরদী, কর্ণফুলী ও আদমজী ইপিজেড এবং চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে অবস্থিত বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল।
সংবাদ সম্মেলনে বেপজা সদস্য মো. আশরাফুল কবীর জানান, গত অর্থবছরে দেশে মোট ১৪৬ কোটি ৮২ লাখ ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছিল। এর মধ্যে শুধু রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলোতে (ইপিজেড) এসেছে ৪২ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। অন্যদিকে গত অর্থবছরে দেশের মোট রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি ডলার। সেখানে বেপজার মাধ্যমে রপ্তানি হয়েছে ৭০৭ কোটি ডলারের পণ্য। প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ অবদান রাখছে বেপজা।
২০২৪ সালে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বেপজার সঙ্গে ২৮টি নতুন বিনিয়োগ চুক্তি হয়েছে বলে জানান আশরাফুল কবীর।
তিনি বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের মোট প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ৫৬ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এ পর্যন্ত বেপজার ইপিজেডগুলোতে ৩৮টি দেশ থেকে বিনিয়োগ এসেছে। সবচেয়ে বেশি এসেছে চীন থেকে। চীনের মোট ১০৮টি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ রয়েছে ইপিজেডে। এরপর বিনিয়োগ করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার ৬১টি, জাপানের ২৯টি, ভারতের ১৯টি, যুক্তরাজ্যের ১৯টি, যুক্তরাষ্ট্রের ১৭টি ও শ্রীলঙ্কার ৭টি প্রতিষ্ঠান। বাকিগুলো অন্যান্য দেশের।
বর্তমানে আটটি ইপিজেড ও বেপজার অর্থনৈতিক অঞ্চলে মোট ৪৪৯ শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। এর মধ্যে শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ২৫৮টি, যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ৪৯টি ও শতভাগ দেশীয় প্রতিষ্ঠান ১৪২টি। এ ছাড়া আরও ১০৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণাধীন রয়েছে। এর বাইরে পটুয়াখালী ও যশোরে দুটি ইপিজেড স্থাপনের কাজ চলছে। আর গাইবান্ধায় একটি ইপিজেড স্থাপনের জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মন্তব্য করুন