শিল্পে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ও ৪৩টি পণ্যের শুল্কহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বাণিজ্য ও বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব বিষয় জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।
ঢাকা চেম্বার জানায়, এ সিদ্ধান্তের জেরে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে পণ্যের মূল্য বাড়বে। পরিণামে মূল্যস্ফীতি বাড়বে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে দীর্ঘমেয়াদি কর–সুবিধার পাশাপাশি নীতি ধারাবাহিকতার প্রতিশ্রুতি রক্ষার মাধ্যমে স্থিতিশীল ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখা আবশ্যক বলে মনে করছে তারা।
সম্প্রতি শিল্প ও ক্যাপটিভের প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম যথাক্রমে ৩০ টাকা ও ৩১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা বাড়িয়ে দ্বিগুণের বেশি করার প্রস্তাব দিয়েছে পেট্রোবাংলা। এ ছাড়া প্রায় ৪৩টি পণ্যের ভ্যাট ও শুল্ককর দ্বিগুণ করার উদ্যোগের পাশাপাশি মোটরসাইকেল, রেফ্রিজারেটর, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) ও কম্প্রেসর শিল্পের আয়কর ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
ঢাকা চেম্বার বলেছে, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত না করেই দাম দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধির প্রস্তাব নিঃসন্দেহে দেশের শিল্প খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে ব্যবসার ব্যয় কয়েক গুণ বাড়বে।
ডিসিসিআই মনে করে, বর্তমান পরিস্থিতিতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে সামগ্রিক বিনিয়োগের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে যেমন নতুন শিল্প স্থাপনের সম্ভাবনা কমবে, তেমনি বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের ব্যবসা পরিচালনা বিঘ্নিত হবে। এতে রপ্তানিমুখী শিল্পের উৎপাদন খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে। দুর্বল হবে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা; কমবে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ।
এ ছাড়া দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিদ্যমান নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে মোটরসাইকেল, রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার ও কম্প্রেসর নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের করহার দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত উদ্বেগজনক বলে মনে করছে ডিসিসিআই। এসব খাতের প্রতিশ্রুত কর–সুবিধা ২০৩২ সাল পর্যন্ত বহাল থাকার কথা থাকলেও তা হঠাৎ যে পরিবর্তন করা হলো, তা বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বিদ্যমান এই পরিস্থিতিতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব এবং বিভিন্ন পণ্যের ভ্যাট ও করহার বৃদ্ধি সামগ্রিক অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। ডিসিসিআই মনে করে, দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বিদ্যমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ উত্তরণের লক্ষ্যে সরকার-বেসরকারি খাতসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি।
এ অবস্থায় দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক অগ্রগতির কথা বিবেচনায় রেখে পেট্রোবাংলা প্রস্তাবিত শিল্প খাতে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগ পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে ডিসিসিআই। ব্যবসা পরিচালন ব্যয় ও মূল্যস্ফীতির চাপ হ্রাসের লক্ষ্যে এ মুহূর্তে ভ্যাট ও করহার বাড়ানোর উদ্যোগ পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা।
মন্তব্য করুন