প্রতি পিস ডিম ১২ টাকার বেশি দামে বিক্রি করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
সোমবার (১৪ আগস্ট) ডিমের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে ডিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান (ফার্ম ও করপোরেট), এজেন্ট, ডিলার ও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যদের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভায় এ ঘোষণা দেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান। একই সঙ্গে আগামী ১৬ আগস্ট থেকে সর্বস্তরে অভিযানেরও ঘোষণা দিয়েছে দপ্তরটি।
এদিকে, গতকাল রোববার বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে অসাধু ডিম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বাড্ডা, কাপ্তান বাজার, ওয়ারী ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় র্যাব ফোর্সেসের ১ ও ১০ এর সমন্বয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিশেষ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে। এতে যেসব ব্যবসায়ীর কাছে ডিমের ক্রয়-বিক্রয় রশিদ সঠিক পাওয়া যায়নি এবং ডিমের দাম বৃদ্ধির সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি এমন ৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর আগে, গেল রোববার প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৫০ পয়সা বলে জানিয়েছেন। একই সঙ্গে খুচরা পর্যায়ে এর দাম কোনোভাবেই ১২ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয় বলেও তিনি জানান। এই ঘোষণার পর থেকে পাইকারি বাজারে কমতে শুরু করেছে ডিমের দাম। কিন্তু খুচরা বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়ছে না। শনিবার রাতে যে ডিম পাইকারিতে ১২ টাকা ৪০ পয়সা বিক্রি হয়েছিল রোববার রাতে ১২ টাকায় বিক্রি হয়। গতকাল সোমবার রাতে এই দাম আরও কমে আসবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তবে এখন পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও খুচরা পর্যায়ে প্রতি পিস ডিম ১৪ থেকে ১৫ টাকা দামে বিক্রি হওয়া খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ভোক্তার সভা থেকে জানা গেছে, ডিমের বাজার অস্থিরতা তৈরি করে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ভোক্তার পকেট থেকে অতিরিক্ত মুনাফা করছে। প্রতিদিন ৪ কোটি ডিমের চাহিদার বিপরীতে প্রতি পিসে দুই থেকে তিন টাকা বেশি দামে বিক্রি করে ভোক্তার কাছ থেকে ৮ থেকে ১২ কোটি টাকা বাড়তি মুনাফা করা হয়েছে। এ টাকা খামারি, পাইকারি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত সবার পকেটে ঢুকেছে বলে জানিয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তর।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘এতদিন আমাদের কাছে ডিম উৎপাদনের সঠিক খরচ ছিল না। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে আমরা সেটা জেনেছি। খুচরায় কত দাম হবে সেটাও বলা হয়েছে। সুতরাং আমরা কেউ একটা ডিমের দাম ১২ টাকার বেশি নিলে তাদের বিরুদ্ধে শুধু জরিমানা নয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘ডিম এমন একটা পণ্য যা সারা দেশের সব শ্রেণির মানুষের ওপরেই প্রভাব ফেলে। গত বছর ডিমের বাজারে অস্থিরতার সময় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল রশিদ ছাড়া ডিম ক্রয় বিক্রয় না করতে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সেটা মানে নাই। এবারও আমরা বাজার মনিটরিংয়ে যাওয়ার পর একই অবস্থা দেখতে পাই। কিন্তু আমরা রশিদ ছাড়া কেউ বেচাবিক্রি করলে তাদের বিরুদ্ধে জরিমানাসহ কঠোর ব্যবস্থা নেব। আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
১২ টাকা দামের প্রসঙ্গে উপস্থিত ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা জানান, ১০ টাকা ৫০ পয়সা উৎপাদন খরচ হলে সেটা খুচরায় ১২ টাকা বিক্রিতে সমস্যা তৈরি হবে। খামার থকে ভোক্তা পর্যন্ত ৪ থেকে ৫ হাত বদল হয়। কে কত লাভ করবে সেটা বলে দেওয়া উচিত।
পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ‘ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৮৫ পয়সা, সুতরাং খুচরা মূল্য ১৩ টাকা হওয়া উচিত।’
তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি হাজী মো. আমান উল্লাহ জানান, ডিমের দাম ১৩ টাকার কমে নামলে সেটা খামারিদের লোকসানে ফেলবে।
অনুষ্ঠানে ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কাজী, প্যারাগনের মতো বড় প্রতিষ্ঠান সাড়ে ১০ টাকা ডিম উৎপাদন করে সর্বোচ্চ ১১ টাকা ৪০ পয়সায় ডিম বিক্রি করেছে। আমরা কি যৌক্তিক উপায়ে ১০ শতাংশও লাভ করতে পারব না?
তিনি বলেন, ‘ডিমের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের উৎপাদনের পরিকল্পনা করা দরকার। এ বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ নিতে হবে।
ব্যবসায়ীদের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘কে কত লাভ করবে সেই নেগোসিয়েশন করতে হলে উৎপাদনকারী, ব্যবসায়ীদের প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করতে হবে, সেই সুযোগ রয়েছে। এখন আমরা ১২ টাকা ধরেই বাজারে অভিযান পরিচালনা করব।’
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মো. শাহিনুর আলম বলেন, ‘উৎপাদনের সঙ্গে বিপণনের সামঞ্জস্যতার জন্য সরকার নানা ধরনের পলিসি, কর্মকৌশল, গাইডলাইন তৈরির কাজ শুরু করেছে। একই সঙ্গে মধ্যস্বত্বভোগীদের শৃঙ্খলার মধ্যে আনতেও কাজ করছে সরকার।
সভায় ডিমের বাজারে যারা অস্থিরতা তৈরিতে কাজ করেছে, তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে জানিয়ে প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা মামলা করার জন্য তথ্য সংগ্রহ করছি।’
মন্তব্য করুন