এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমালের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ব্যাংকটির এমন ৬ কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
তারা হলেন- ব্যাংকটির হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ারস কামরুল হাসান, হেড অব আইসিটি দিদারুল হক মিয়া, হেড অব এমআইএস রাজিদুল ইসলাম, ব্যাংকের প্রধান ফরেক্স ডিলার জমির উদ্দিন, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা জাফর ইকবাল হাওলাদার ও হেড অব সিকিউরিটি ফোর্সেস ফরহাদ সরকার।
রোববার (১ ডিসেম্বর) এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের নিকট পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, এর আগে তমালসহ অন্য কর্মকর্তাদের জব্দ হওয়া ব্যাংক হিসাবের সঙ্গে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়ার পর এই ৬ কর্মকর্তার বিষয়ে তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ।
সংস্থাটির চিঠিতে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে উল্লেখিত কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো হিসাব পরিচালিত হয়ে থাকলে হিসাবগুলোর সার্বিক তথ্য ও দলিলাদি (হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ফরম, হিসাব খোলার তারিখ থেকে হালনাগাদ লেনদেন বিবরণী, ইত্যাদি) দাখিল করতে বলেছে বিএফআইইউ।
এর আগে ১৪ নভেম্বর এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল ও ব্যাংকের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) জাফর ইকবাল হাওলাদার এবং সাবেক পরিচালক আদনান ইমামের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ জারি করে বিএফআইইউ।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়া ৯টি ব্যাংকের একটি এনআরবিসি ব্যাংক। শুরু থেকেই নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে। ব্যাংকটির জালিয়াতির নানা তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা ছাড়াই ব্যাংকটির শীর্ষপদে নিয়োগ পান বেশ কয়েকজন। এরপর কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয় ভিন্ন কোম্পানি খুলে। ব্যাংকের ভেতরে গড়ে তোলা হয় বিশেষ সিন্ডিকেট, যারা ব্যাংকের প্রায় সব সিদ্ধান্ত নেন। তারাই আবার ঋণ বিতরণ করত পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে।
এছাড়া ব্যাংকটির পরিচালকদের বিরুদ্ধে বাজেয়াপ্ত শেয়ার ক্রয় ও ব্যাংকের উপশাখার সব ব্যবসা এনজিও এসকেএস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পনির্ভর করে ফেলার অভিযোগও রয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের নিকটাত্মীয়কে নিয়োগ দেওয়া হয় শীর্ষ পদে। ফলে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়ম করার পরও ব্যাংকটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন ব্যাংকটির দিকে নজর দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকের চেয়ারম্যান বহুল আলোচিত পারভেজ তমালের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাও দায়ের হয়েছে। তবে তিনি এখনো গ্রেপ্তার হননি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুকম্পা পেতে তদবির করছেন এ বিতর্কিত ব্যক্তি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো বেশ কয়েকটি অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। দুর্বল কয়েকটি ব্যাংকের অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলেই এনআরবিসির বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটির বোর্ড ভেঙে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্তও আসতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, পারভেজ তমাল পলাতক থাকা সত্ত্বেও নিজের একক ক্ষমতায় তার সিন্ডিকেটের সদস্যদের অস্বাভাবিক পদোন্নতিসহ বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে তমালচক্রের দুর্নীতির কথা তদন্তকারী সংস্থার কাছে প্রকাশ না করে গোপন রাখার প্রতিশ্রুতি নেওয়া হচ্ছে। এসব কর্মকর্তা এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারির আওতায় পড়লেন।
মন্তব্য করুন